অবৈধ সংযোগের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যুর অভিযোগ

নিহতদের স্বজনদের আহাজারিপল্লী বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগের তার ছিঁড়ে পড়ার কারণে পঞ্চগড়ে একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার (২১ জুলাই) অবৈধ সংযোগ বন্ধ করাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় রবিবার (২১ জুলাই) অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মান্নানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, শনিবার রাতে বাড়ির পাশের একটি জলাশয়ে মাছ ধরতে গেলে নজিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে তার ছোট ভাই আসাদুল ইসলাম তাকে উদ্ধার করতে গেলে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। শেষে বাবা শহিদুল ইসলাম তাদের উদ্ধার করতে গেলে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাদের তিনজনকে পড়ে থাকতে দেখে শহিদুলের নাতি মো. মামুন (১৪) চিৎকার করলে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। তারা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে সংযোগ বন্ধ করে দেন। পরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শহিদুলের ভাই নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অবিলম্বে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগদাতা ও গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এতে বিদ্যুৎ অফিসের যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এই অবৈধ সংযোগের কারণেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।’

ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাহানপাড়া এলাকার দশ বারোটি বাড়িতে অবৈধভাবে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তারই একটি তার ছিঁড়ে তিনজন মারা গেলো। এ ঘটনার বিচার হওয়া দরকার।’

শহিদুলের দ্বিতীয় ছেলে নাছির আলী জানান, ছোটভাই আসাদুল ইসলাম মাত্র ২১ দিন আগে বিয়ে করেছিল। বড় ভাইয়ের দুই সন্তান স্কুলে লেখাপড়া করে। তাদের মৃত্যু আমাদের তিনটি পরিবারকে নিঃস্ব করে  দিল।’ 

হাফিজাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুসা কলিমুল্লাহ প্রধান বলেন, ‘বিদ্যুতের লাইনটি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির আগেই খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। ঘটনাটির একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক এটাই আমাদের দাবি।’

পঞ্চগড় সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আল তারিক বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ইলেক্ট্রিশিয়ানরা দরিদ্র মানুষের কাছে টাকা নিয়ে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। শুধু এই তিনজনই নয়, এর আগেও পঞ্চগড়ে প্রাণহানি ঘটেছে। পল্লী বিদ্যুতের দায়সারা কাজ আর নজরদারি না থাকায় এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে।’

এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক আবু আশরাফ সালেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে খবরটি পেয়েছেন। আমাদের লোকজন ঘটনাস্থলে গেছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। একটি মিটারে দুটি লাইন চলা অবৈধ। এর সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের কেউ জড়িত থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’