একই উত্তর ১৮ জনের খাতায়, ৩ বছর বসতে পারবে না আর পরীক্ষায়

482e5ffdf4d72e25bc4ffe58d02a4c8a-5d4f1cb41b883

বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার খাতায় ১৮ জনের উত্তরপত্র হুবহু মিলে যাওয়ায় শাস্তি দিয়েছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তাদের ২০১৯ সালের পরীক্ষা বাতিল করার পাশাপাশি আগামী তিন বছর পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ ও শাস্তির ৪২ নম্বর আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এদের বিরুদ্ধে মামলা দিলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড এবং উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে ওই পরীক্ষার্থীদের শাস্তি হিসেবে এবারের পরীক্ষা বাতিল ও পরবর্তী তিন বছর পরীক্ষা দেওয়া থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

তিনি আরও জানান, যাদের মাধ্যমে উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের হাতে গিয়েছে তাদের বের করার জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবশ্য প্রাথমিক তদন্তে একজনের অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি হচ্ছেন অফিস সহকারী গোবিন্দ্র চন্দ্র।

বুধবার (১৪ আগস্ট) বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, শৃঙ্খলা কমিটির ৩৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষায় ১৮ জন পরীক্ষার্থীর নিয়ম বহির্ভূতভাবে অংশগ্রহণ করা ও উত্তরপত্র জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ায় তাদের শাস্তিস্বরূপ ২০১৯ সালের পরীক্ষা বাতিল এবং তারা তিন বছর পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পাবে না।  নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম।

শাস্তিপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদের রোল হলো:  ১০০৩২৭, ৬০০২১৩, ১০১০১৯৯, ১০১১১৫, ১০২৫৮০, ৬০১৬৭৭, ১০৯৭৬১, ১০৯৭৬৭, ৬০৪৭৬৯, ১০০৯১৯, ৬০০২৫২, ১০১০৮৭, ৯০০০২৫, ১০৪০৩৭, ১০৫৮৪২, ১০৯৭৯০, ৬০৪৭৩৫, ১১২০১৪।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষার উচ্চতর গণিতের লিখিত পরীক্ষায় নম্বর ছিল ৫০। এর মধ্যে ক অথবা খ যে কোনও গ্রুপ থেকে কমপক্ষে দুটিসহ ৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। কিন্ত শাস্তিপ্রাপ্ত চারজন পরীক্ষার্থী ফাঁস করা উত্তরপত্র দেখে সব অঙ্কই একই গ্রুপ থেকে তুলে রাখে। ফলে তাদের ৪০ দেয়া হয়। বাকি ১৪ জন পেয়েছে ৫০ এর মধ্যে ৫০। শুধু তাই নয় একটি অঙ্ক এসেছে যেটি করতে গেলে যে কারও অন্তত ১০ বার কাটাছেঁড়া করতে হবে। অথচ ওই ১৮ পরীক্ষার্থী নিখুঁতভাবে সেই অঙ্ক খাতায় তুলে রাখায় বিষয়টি ধরা পড়ে।

জানা যায়, এবার এইচএসসির উচ্চতর গণিতের খাতা নিরীক্ষণের দায়িত্ব পান নলছিটি সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. আবু সুফিয়ান। এ বছর উচ্চতর গণিতের ২০০টি উত্তরপত্র নিরীক্ষণ করেন তিনি। তবে খাতা নিরীক্ষা করতে গিয়ে ১৮টি খাতায় সমস্যা পান। ওইসব খাতায় উত্তর এমনভাবে লেখা হয়েছে যেখানে নম্বর কাটার কোনও উপায় নেই। শুধু তাই নয় ১৮টি খাতায় একটি দাঁড়ি, কমাও ভুল ছিল না। সুফিয়ান মিলিয়ে দেখেন শিক্ষাবোর্ড থেকে উচ্চতর গণিত বিষয়ের উত্তরপত্র যেভাবে তৈরি করা ঠিক সেভাবেই ওই ১৮টি খাতায় উত্তর লেখা হয়েছে। সেখানে কোনও ভুল নেই। বিষয়টি দেখে সন্দেহ হলে তিনি প্রধান পরীক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রধান পরীক্ষক খাতাগুলো নিয়ে আসেন শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে। এরপরই বেরিয়ে আসে জালিয়াতির মূল কাহিনী।