এ প্রসঙ্গে পদাধিকার বলে বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ‘যেনতেনভাবে সুইমিং পুল নির্মাণ করে যারা কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাবেক ক্রিকেটার ও কিউরেটর জহিরুল ইসলাম জাফর জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নগরীর চাঁদমারীস্থ স্টেডিয়ামের সামনে সুইমিংপুল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালের ১ জুন এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এন হক অ্যান্ড সন্স কাজ পায়। ওই বছরই অক্টোবর মাসে সুইমিংপুলের কাজ শেষ হলে পরীক্ষামূলকভাবে পানি ওঠাতে গিয়ে সেখানে ফাটল ধরা পড়ে। ওই অবস্থায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুইমিংপুলটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে চাইলে তারা অসম্মতি জানায়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাটল ঠিক না করেই পুরো বিল তুলে নেয়।
ওই অবস্থায় ২০০০ সালের ১১ এপ্রিল সুইমিংপুলটির উদ্বোধন করা হয়। সরকার পরিবর্তনের পর চারদলীয় জোট সরকারের একটি গ্রুপ ওই সুইমিংপুল ভেঙে নতুন করে নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু তা বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি। সুইমিংপুল ভাঙার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে পুলের গ্রাউন্ড ও চারপাশের মেঝেতে টাইলস বসানোসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কাজের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর ফাটল সারানো ও সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় আরও ৮ লাখ টাকা। ওই টাকায় যেনতেনভাবে ফাটল সারানোসহ সড়কের কাজ করে সে টাকাও লুটপাট হয়।
এসব কারণে বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় সুইমিং পুলটি পড়ে থাকায় উঠে গেছে টাইলস, খসে পড়েছে পলেস্তারা। জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে পাম্প হাউস ও টয়লেট। এমনকি সুইমিং পুলের নিচে কিছু লোক বাসাবাড়ি করে থাকছে।
বরিশালের আইনজীবী এসএম সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘সুইমিং পুলটির কাজ শুরুর সময় নগরবাসী মনে করেছিল তাদের সন্তানদের সাঁতার শেখার ভালো একটা ব্যবস্থা হচ্ছে। কিন্তু ভাবা পর্যন্তই শেষ। এরপর আর আসল কাজ কিছুই এগোয়নি। বরিশাল মহানগরীতে রূপান্তরের পর এখানে যেমন দালানকোঠা বেড়েছে তেমনি বিভিন্ন পুকুর ও খাল ভরাট হয়ে গেছে। তাই নগরীর ছেলেমেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য সাঁতার শেখার তেমন কোনও জায়গা নেই। এজন্য বিভাগীয় শহরে নতুন সুইমিংপুল নির্মাণের দাবি জানিয়েছে নগরবাসী।’
এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য সাইফুর রহমান মিরন বলেন, ‘যারা সুইমিংপুল নির্মাণের নামে কোটি কোটি লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতরা লুটপাট থেকে সরে আসবে।’
পুলটি সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পরিত্যক্ত সুইমিংপুলটি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপিকে নিয়ে পরিদর্শন করেছি। তিনিও বিষয়টি অবগত আছেন। এছাড়া শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম ও পরিত্যক্ত সুইমিংপুলটি সংস্কারে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’