‘সুনাম দেবনাথ রিফাত হত্যার নির্দেশদাতা, সে কেন আসামি হবে না?’

 

রিশান ফরাজী‘সুনাম দেবনাথ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার নির্দেশদাতা। সে কেন এই মামলার আসামি হবে না? মিন্নি কেন ৭ নম্বর আসামি? আমরা সুনাম দেবনাথের লোক।’ বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশি পাহারায় হাজিরা দিতে এসে সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে এই কথা বলেন রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি রিশান ফরাজী।











উল্লেখ্য, সুনাম দেবনাথ বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার নিয়মিত ধার্য তারিখে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজী রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ছয় কিশোরকে যশোর শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিন্নিসহ আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে প্রিজন ভ্যানের ফাঁক দিয়ে বাইরের মানুষজন ও সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে রিশান ফরাজী বলেন, ‘আমরা সুনাম দেবনাথের লোক।’ এই কথা বলেই তিনি ভ্যানের ভেতর নিজেকে লুকিয়ে ফেলেন। এরপর প্রায় আধাঘণ্টা পর আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রিজন ভ্যানে ওঠার মুহূর্তে রিশান ফরাজী আবার বলে ওঠেন, ‘সুনাম দেবনাথ নির্দেশদাতা। সে কেন এই মামলার আসামি হবে না?’
এবিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও এমপি পুত্র সুনাম দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের চিরচেনা প্রতিপক্ষ দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। আমাদের রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করে এসব করাচ্ছে। বরগুনাবাসী সবার কাছে স্পষ্ট এরা কার লোক।’
রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্ত বয়স্ক ১ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক ১ নম্বর আসামি রিশান ফরাজী বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। রিফাত হত্যার পরপরই এবিষয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়। স্থানীয়রা বলছেন, দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকীর (রিফাত ও রিশান ফরাজীর খালা) সঙ্গে নিহত রিফাত শরীফের এক সময় বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। সেই প্রতিশোধ নিতেই রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার সময় রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীকে আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যায়।
এর আগে গত রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। একই সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এবিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। তবে বরগুনা সদর থানার পরির্দশক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘রিশান ফরাজীকে রিমান্ডে নিয়ে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তখন এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথকে নিয়ে সে কোনও কথা বলেনি। এমনকি আদালতের কাছে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও সে এধরণের কোনও মন্তব্য করেনি।’