এ অবস্থায় খুশির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘বিভিন্ন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের শিক্ষার্থী রহিমা আকতার খুশির জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব নিয়ে অভিযোগ উঠে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাই-বাছাই করার জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত চলাকালীন খুশির ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে স্থগিত করার বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে তার বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একই সঙ্গে খুশি বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সংগঠন বন্ধুসভার জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক। এছাড়া ওমেন লার্নিং সেন্টার, মার্কি ফাউন্ডেশন, কক্সবাজার সরকারি কলেজের স্কাউটসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত। তার নাগরিকত্ব নিয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই পত্রিকার বন্ধুসভার দায়িত্ব থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পত্রিকাটির বন্ধুসভার কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ইব্রাহিম খলিল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অর্থ সম্পাদক পদ থেকে রহিমা আকতার খুশিকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বন্ধুসভার এক জরুরি সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে খুশি নিজেকে বাংলাদেশি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে তাকে স্থায়ীভাবে বন্ধুসভা থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে এই তরুণীর লেখাপড়াসহ রোহিঙ্গাদের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে মত দিয়েছেন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। তারা বলছেন- দেশের নিয়ম মেনে ক্যাম্পের গন্ডির মধ্যেই তার লেখাপড়া সীমিত রাখা দরকার। এ বিষয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এক দেশের নাগরিক আরেক দেশে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তবে সে দেশের আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি মেনেই শিক্ষা লাভ করতে হবে। যেমন আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা অন্য দেশে গিয়ে লেখাপড়া করছে সেই দেশের নিয়ম মেনে, পরিচয় গোপন করে নয়। এক্ষেত্রে দুইটি বিষয় রয়েছে- দেশের আইন এবং মানবিকতা। যদি মানবিকতা চিন্তা করি তাহলেও সে দেশের সরকারের নজরে আনা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্রয় দিয়েছি, দীর্ঘদিন এখানে থেকে যাওয়ার জন্য নয়। আমরাও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নিয়েছি, তাই বলে আমরা দীর্ঘ সময় ওখানে তো থেকে যাইনি? রোহিঙ্গাদের চিন্তা করতে হবে যেকোনো সময় তাদের এদেশ থেকে চলে যেতে হবে। এতে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে লাভ কি? এছাড়া যতদিন তারা আমাদের দেশে থাকবে ততদিন ক্যাম্পের ভেতরে তো পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।’
রোহিঙ্গা ও প্রত্যাবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অবশ্যই সরকারের পলিসি মেনে চলতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই তো বিভিন্ন এনজিও অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। রোহিঙ্গারা চাইলে তো সেখানে সাময়িক পড়ালেখা করতে পারে, বার্মিজ ও ইংরেজি ভাষা শিখতে পারে। তাদের বাইরে যাওয়ার তো দরকার নেই। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো বিধি-বিধান নেই। এছাড়া সরকার তাদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করেনি।’