আইসিএসডি সম্মেলন

সামাজিক অস্থিরতা দূর করতে কৌশলগত পরিকল্পনার তাগিদ

আইসিএসডি সম্মেলনে আলোচকরা (ছবি– প্রতিনিধি)

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাশিদ আসকারী বলেছেন, ‘সামাজিক অস্থিরতার পেছনে অনেক কারণ কাজ করে; যার অন্যতম হলো দারিদ্র্য, জনসংখ্যা সমস্যা, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, অভিবাসন সমস্যা, বৈশ্বিক উষ্ণতা ইত্যাদি। এ থেকে মুক্তির পথ—ব্যাপকভিত্তিক কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন।’

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনের সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আন্তর্জাতিক জোট আইসিএসডি সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এ সম্মেলনের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন।

আইসিএসডি সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাশিদ আসকারী বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যে কথা বলছি, সেটা প্রথম থেকে তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের একটি পরিশীলিত রূপ; যেখানে মানব উন্নয়নসূচক অনেক গুণে বাড়বে। আমরা চাই, মানুষে মানুষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এই সহাবস্থানই আমাদের সব অস্থিরতা থেকে রক্ষা করবে।’

সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. রাশিদ আসকারী।

সম্মেলনের আয়োজক, পৃষ্ঠপোষক ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘সামাজিক অস্থিরতা এখন বিশ্বজুড়েই একটি সমস্যা। প্রতিদিনই আমরা অবলোকন করছি, বিশ্বের একপ্রান্ত  থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত অব্যাহতভাবে আত্মহত্যা বা নরহত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। আমরা যেখানেই থাকি না কেন, কেউ এর হাত থেকে মুক্ত নই। এখনই সময় এগুলোকে রুখে দেওয়া এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সর্বপ্রথম মানুষের অধিকার রক্ষায় মনোযোগ দিতে হবে, মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণ করতে হবে। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে; যা মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধি করবে।’

মো. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন; যা কোনও রাজনৈতিক বিষয় ছিল না। বর্তমানে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। এজন্য দ্রুত টেকসই উন্নয়ন ছুঁতে চলেছি আমরা।’

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. সেলিম তোহা বলেন, ‘এ ধরনের সেমিনার সব ধরনের সামাজিক বৈষম্য ও দ্বন্দ্ব বিলোপ করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে যে রোহিঙ্গা সমস্যা বিরাজমান, সেসবও দ্রুত সমাধান হবে এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থাপনায় সম্মেলনে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মনোহর পাওয়ার। এছাড়া বক্তব্য রাখেন–রয়্যাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক প্রফুল্ল চন্দ্র সরকার, সম্মেলনের সমন্বয়ক ইবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান ও আইএসডিএপির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. অশোক কুমার সরকার।

আইসিএসডি সম্মেলনে এশিয়া, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশসহ ৮টি দেশের ৪৭ জন বিদেশি বিশেষজ্ঞসহ ২৬৭ জন সমাজতাত্ত্বিক, শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন বিশারদ এবং গবেষক অংশ নেন। এতে গবেষকরা যেসব বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সেগুলো হচ্ছে–গৃহযুদ্ধ, শরণার্থী এবং সামাজিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং শান্তি ও উন্নয়নের ওপর এর প্রভাব, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সামাজিক অস্থিরতা, বিশ্বায়ন ও অভিবাসন এবং শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় নির্ধারণ, লিঙ্গ বৈষম্য, সহিংসতা, শান্তি এবং উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং শান্তি ও উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি, শান্তি, শিক্ষা, সামাজিক উদ্যোগ এবং টেকসই উন্নয়ন, সামাজিক অস্থিরতা, শান্তি এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া (বা সংকট), সংঘাত নিরসন এবং শান্তি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠার জন্য এনজিও, সামাজিক অস্থিরতা দূরীকরণ এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা, জাতিগত, ধর্মীয় এবং সামাজিক অপ্রকাশ এবং কীভাবে শান্তি ও বিকাশ প্রতিষ্ঠা করা যায়।

প্রসঙ্গত, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে এ ধরনের বৃহৎ আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবারই প্রথম। সম্মেলনের সহযোগী আয়োজক সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব সোশ্যাল সায়েন্স এবং থাইল্যান্ডের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে সংস্থাটির ষষ্ঠ দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সিঙ্গাপুরে। দুই দিনের এই সম্মেলন শেষ হবে আগামীকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) রবিবার।