মা হলো নুসরাত হত্যা মামলার কারাবন্দি আসামি মনি

কামরুন নাহার মনিফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুন নাহার মনি কন্যা সন্তানের মা হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে স্বাভাবিক ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করে সে। ফেনী জেলা কারাগারের জেলার দিদারুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

দিদারুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে কারাবন্দি মনির প্রসববেদনা শুরু হলে দ্রুত তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোরের দিকে সে কন্যা সন্তান প্রসব করে।’

তিনি বলেন, ‘ফেনী মডেল থানা পুলিশ ও কারাগারের একাধিক কারারক্ষীর (পুরুষ ও মহিলা) তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে মনি। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলে কঠোর নিরাপত্তায় পুনরায় তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে।’

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) মো. আবু তাহের পাটোয়ারী জানান, স্বাভাবিক ডেলিভারি হওয়ায় মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ রয়েছে। রবিবার সকালে আসামিকে হাসপাতাল থেকে অব্যাহতিপত্র দেওয়া হবে।

আদালত সূত্র জানায়, নুসরাত হত্যা (কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া পাঁচজনের একজন) মামলার অন্যতম আসামি কামরুন নাহার মনিকে গত ১৬ এপ্রিল গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারের সময় মনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তার জবানবন্দি অনুযায়ী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার সময় ব্যবহৃত বোরকাগুলো উদ্ধার করে পিবিআই। এরপর নুসরাত হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গত ২০ এপ্রিল মনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। এই মামলার ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে চলতি মাসেই রায়ের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন আদালত।

প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। অভিযোগ অনুযায়ী নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাইয়ের দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।