নদী ঘুরে দেখা গেছে, অসাধু জেলেরা এ নিষেধাজ্ঞা না মেনে জাল ফেলছে নদীতে। ঝাঁকে-ঝাঁকে মা ইলিশ আটকা পড়ছে অবৈধ কারেন্টজালসহ বিভিন্ন ধরনের জালে। অসাধু এসব জেলেকে মাছ শিকার থেকে বিরত রাখতে কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, মৎস্য অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স নদীতে অভিযান চালাচ্ছে। তবে নদী পাহারায় যে পরিমাণ জনবল দরকার তা নেই। এ কারণে সুযোগ পেলেই নদীতে বিশাল জাল ফেলে পাড়ে দলবদ্ধভাবে অবস্থান নিচ্ছে জেলেরা। সুযোগ বুঝে নদীর পাড় ও চরে শিকার করা ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে। চাঁদপুরের মতলব উত্তর, হাইমচর, সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর, লক্ষ্মীপুর, ইব্রাহিমপুর, হরিণাসহ নদীপাড়ের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে এ অবস্থা।
টাস্কফোর্স সদস্যরা জানিয়েছেন, চাঁদপুরেই রয়েছে অর্ধলক্ষাধিক জেলে। নদীতে অভিযান চালাতে গেলে হামলা করা হচ্ছে কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ সদস্যদের ওপর। বিশাল নদী এলাকার একদিকে টহল দিলে অন্যদিকে নেমে পড়ে জেলেরা।
পুরানবাজার এলাকার নুরুন্নবী ও আবুল হাসেম নামে দুই জেলে বলেন, মোহনপুর, লক্ষ্মীরচর, লগ্মীমারা, মাওয়া, রাজরাজেশ্বর, কাচিকাটা এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় মা ইলিশ নিধন করা হচ্ছে। সরকার আমাদের যে চাল দেয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না। এবার আমাদের যে চাল দেওয়ার কথা, তার খবর এখনও নেই।
মা ইলিশ নিধন হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, চাঁদপুরের ৫১ হাজার ১৯০ জেলের মধ্যে ৬০ ভাগ জেলেকে সহযোগিতার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের ছাগল, গরু, সেলাই মেশিন, চাল দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। তারপরও তারা মা ইলিশ নিধন করছে।
চাঁদপুর কোস্টগার্ডের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কমান্ডার মো. ইছহাক বলেন, অভিযান চালাতে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। নদীতে জেলেরা আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ বিভিন্ন সময় হামলা করেছে। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, যে কারেন্ট জাল জেলেরা ব্যবহার করছে তা নিয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কথা হয়েছে। কারেন্ট জালের কারখানা বন্ধ করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধে আমরা ফাঁকা গুলি ছুড়তে বাধ্য হচ্ছি। চাঁদপুরের নদী সীমানার পাঁচ কিলোমিটার পরপর যদি স্পিডবোট রাখা যায়, তাহলে মা ইলিশ কিছুটা রক্ষা করা সম্ভব হবে।
পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এ সময় মা ইলিশ রক্ষা করা বড় চ্যালেঞ্জ। সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই কাজে কোনও বরাদ্দ না থাকলেও জেলা প্রশাসকের সার্বিক সহযাগিতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি জানান, ইব্রাহিমপুর এবং রাজরাজেশ্বরে মা ইলিশ নিধন বন্ধে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ৪০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। যারা মা ইলিশ নিধনে জেলেদের পেছনে রয়েছে, তাদের বিষয়ে তথ্য দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নৌ-পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের এসপি জমশের আলী বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা নদীতে অভিযান পরিচালনা করছি। তারপরও কোথাও কোথাও জেলেরা জাল ফেলে নদীপাড়ের ক্যানেল এবং চরে ঢুকে যাচ্ছে। অভিযান চালাতে গিয়ে আমরা হামলার শিকার হয়েছি। তারপরও আমরা মা ইলিশ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় ৯ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর এই ২২ দিন নদী ও সাগরে জাল ফেলা এবং সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।