সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান ভোলার বোরহানউদ্দিনে চার জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করেন। তিনি ভোলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারের দাবি করেন। একইসঙ্গে ‘কটূক্তিকারী’ বিপ্লবের ফাঁসি, নিহতদের ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা, গ্রেফতারদের মুক্তিসহ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়। এছাড়া আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দাবি মানা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ভোলার সব উপজেলায় বিক্ষোভ, বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) মানববন্ধন ও শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) নিহতদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাতের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের আহ্বায়ক মাওলানা বশির উদ্দিন, সদস্য সচিব মাওলানা তাজউদ্দিনসহ সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এদিকে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা ভোলা সরকারি স্কুলের মাঠে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ করতে না পরলেও ভোলা প্রেস ক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলনের আগে সমাবেশ করেন। সেখানে পুলিশ ও র্যাবের টহল ছিল।
উল্লেখ্য, গত ১৮ অক্টোবর নিজের ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার অভিযোগে ভোলার বোরহানউদ্দিন থানায় জিডি করেন বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) ওরফে শুভ। তার অ্যাকাউন্ট থেকে ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ওঠে। পুলিশ বিপ্লবের অ্যাকাউন্ট হ্যাকের প্রমাণ পায় এবং দুইজনকে গ্রেফতার করে।
তবে এদিকে ফেসবুকে কথিত বক্তব্যের জেরে একটি পক্ষ উত্তেজনা ছড়ায়। রবিবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদরের ঈদগাহ মাঠে প্রতিবাদ সভার ঘোষণা দেওয়া হয়। পুলিশ সেখানে সতর্ক অবস্থান নিলেও একটি গ্রুপ ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ করে মানুষকে উত্তেজিত করতে থাকে এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পরে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও গুলি চালায়। এই ঘটনায় চার জন নিহত হন।
সহিংসতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে সারাদেশে পুলিশকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় ভোলা জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মামুদুর রহমানকে প্রধান করে ওই দিনই (রবিবার) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন−অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইটি অ্যান্ড এডুকেশন) আতাহার মিয়া ও ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মহসিন আল ফারুক।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত পাঁচ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। রবিবার (২০ অক্টোবর) রাতে বোরহানউদ্দিন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবিদ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ভোলা জেলায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।
আরও পড়ুন...
বোরহানউদ্দিনে পুলিশ-এলাকাবাসী সংঘর্ষে নিহত ৪, অর্ধশতাধিক আহত
যেভাবে বোরহানউদ্দিনে হামলা-সংঘর্ষ
বিপ্লবের আইডি হ্যাক হয়েছিল: পুলিশ সুপার
বোরহানউদ্দিনে সংঘর্ষ: পাঁচ হাজার জনকে আসামি করে মামলা
ভোলার ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় নয়: প্রধানমন্ত্রী
ভোলার ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের ব্যাখ্যা: ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন