২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ, জেলেদের সমুদ্রযাত্রা শুরু

ইলিশ (ফাইল ছবি)

ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) রাত ১২টায়। এরপরেই উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা সমুদ্রযাত্রা শুরু করেছেন। এই অঞ্চলের প্রায় তিন লাখ জেলে ফের পাঁচ মাসের জন্য এই যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন। বরগুনা অঞ্চলের জেলেরা রওনা দিয়েছেন গভীর সাগরে। খুলনা অঞ্চলের জেলেরা সুন্দরবন সংলগ্ন আলোর কোলসহ আশপাশ চর এলাকায় মাছ শিকার করবেন। সাগর থেকে মাছ সংগ্রহ করে চরে এসে তা শুঁটকি করা হবে। আর বিভিন্ন এলাকার মহাজনরাও জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাজা মাছ সংগ্রহ করে স্থানীয় মোকামে হাজির করবেন। এভাবেই চলবে মার্চ পর্যন্ত।   

জানা গেছে, খুলনার ডুমুরিয়ায় সাতশ’, পাইকগাছার হিতামপুর গ্রামে কপোতাক্ষ নদীর পাড়ের দেড় শতাধিক জেলে এই যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।

ডুমুরিয়ার ইলিশ শিকারি জেলে সুকুমার বিশ্বাস বলেন, ’২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে চরম সংকটের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেও ধার দেনা করে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।’

পাইগাছার তপন মণ্ডল বলেন, ‘নৌকা তৈরি, দড়ি বানানো, তেলের ড্রাম প্রস্তুত ও বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করছি। প্রয়োজনীয় লোকও ঠিক করেছি।’

মনিশংকর বিশ্বাস বলেন, ‘মার্চ মাস পর্যন্ত সাগরে অবস্থান করবো। তাই নিজ ও পরিবারের খরচ সামলে নিতে মহাজনের কাছ থেকে দাদন (ঋণ) নিতে হয়েছে।’

ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা ৩০ অক্টোবর রাত ১২টায় শেষ হয়েছে। এখন আর জেলেদের ইলিশ আহরণে বাধা নেই। জেলেরা উৎসবমুখর পরিবেশে সাগরে যাত্রা করছে।’

বরগুনার জেলেদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

বরগুনার জেলেরা জানান, অবরোধের আগের দিন ৮ অক্টোবর সাগর থেকে ফিরে আসেন তারা। পরের দিন বাড়িতে চলে যান। এই দীর্ঘ অবসর ট্রলার ও জাল মেরামতের পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গেই কাটিয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের ট্রলারে মোট ১৭ থেকে ২০ জন জেলে। সবাই সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে মহাজনের আড়তে ফিরেছেন। কেউ কেউ গভীর রাতেই  সমুদ্রে রওনা দিয়েছেন। আবার কেউ সকাল থেকে রওনা হয়ে যাবেন।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলে আলম ফিটার বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে কিন্তু জেলেদের হতাশার দিন এখনও শেষ হয়নি। সাগরে গিয়ে জেলেরা আর ফিরে আসতে পারবে কিনা এমন কোনও নিশ্চয়তা জেলেদের নেই।’ জলদস্যু নির্মূলে একটি ভাসমান র‌্যাব ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

জেলে মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘র‌্যাবের অভিযানে জলদস্যু নির্মূল হলেও আবারও নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তারা। তাই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি অনুরোধ থাকবে জলদস্যু নির্মূলে গভীর সমুদ্রে র‌্যাব ক্যাম্প স্থাপন করা হোক।’

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন,  ‘জলদস্যু নির্মূলে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিভিন্ন সময় র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী অভিযান চালিয়ে জলদস্যুদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। জেলেরা যাতে নির্বিঘে ইলিশ শিকার করতে পারে, সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।’