পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুল্লা গ্রামের ‘বড় উঠান সমবায় সমিতি’র নামে চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলী জলমহালের ইজারা পান সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ দাস। কিন্তু জলমহালের সীমানা নির্ধারণ না হওয়ায় পাশের গ্রাম হাজিপুর, আতরাপাড়া, পাইকপাড়া গ্রামের লোকজন বিলের একাংশ নিজেদের দাবি করে মাছ ধরার জন্যে বাঁধ নির্মাণ করে। এতে বুল্লা গ্রামের ইজারাদাররা ক্ষুব্দ হয়ে বাঁধা দেন। কিন্তু বাঁধা না মানায় ইজারাদারদের পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হাজীপুর, আতরাপাড়া ও পাইকপাড়া গ্রামের লোকজনকে ধাওয়া করে। পরে হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যদিয়ে গত দুইদিন ধরে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে দুই গ্রামের মধ্যবর্তী কামালপুর গ্রামের অন্তত ৩০টি বসত ঘর পুড়িয়ে দেয় দুবৃর্ত্তরা। এ ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলার ঘটনার জন্যে এক পক্ষ অন্যপক্ষকে দায়ি করছে।
এদিকে বিলের জায়গা ব্যক্তি মালিকানার দাবি করে হাজিপুর গ্রামের মো. দানু মিয়া, জাকির মিয়া জানান, হুগলি বিলের নিদিষ্ট কোনও সীমানা নির্ধারণ করেনি প্রশাসন। আমরা আমাদের জায়গায় মাছ ধরার জন্যে প্রস্ততি নেই। কিন্তু বুল্লার লোকজন আমাদের গ্রামের লোকজনের ওপর অন্যায়ভাবে হামলা করে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই। তারা অতর্কিত হামলার জন্যে বুল্লা গ্রামের লোকজনকে দায়ী করেন। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
বিবাদমান দুই গ্রাম বুল্লা এবং হাজীপুর গ্রামের সমর্থকদের মধ্যে সংর্ঘষ চলাকালে কোনোপক্ষে অবস্থান না নেওয়ায় গত রবিবার (৩ নভেম্বর) দুই গ্রামের মধ্যবর্তী কামালপুর গ্রামের অন্তত ২৫টি বসত ঘর পুড়িয়ে দেয় দুবৃর্ত্তরা। এসময় বাড়িঘর লুটপাট করে তারা। এঘটনায় সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে অনেকের।
কামালপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বিধবা জোৎস্না আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। আমি দুই সন্তানকে নিয়ে এই ভিটে বাড়িতে বসবাস করছি। গত রবিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে কোনও কারণ ছাড়াই দাঙ্গাবাজরা আমার ঘরটি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
এই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত আরেক গৃহবধূ শরিফা আক্তার বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ আগে সৌদি আরব থেকে বাড়িতে এসেছি। কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে এসেছিলাম। হামলাকারীরা চোখের সামনেই সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এক পর্যায়ে দাঙ্গাবাজরা আমার ঘরে আগুন জ্বেলে পুড়িয়ে দেয়। আমরা এঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার সহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্যে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহ দুটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহের নিগার বলেন, ‘আমরাশুরু থেকেই ব্যাপারটি গুরুত্বের সঙ্গে মনিটরিং করছি। ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি জেলা থেকে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা আছে।
বিলের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সুরাহা করা হবে।’
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফয়জুল আজীম বলেন, ‘আমরা জানি যে এ বিলের কোনও স্থায়ী সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। ইজারাদাররা তাদের জন্য ২৪ একর ৬২ শতাংশ সীমানা নির্ধারণ করেছে। সেই সীমানার সঙ্গে ব্যক্তিমালিকানাধীন জলাভূমিও আছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু-দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশসহ অনেক গ্রামবাসী আহত হয়েছে। আমরা মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য চেষ্টা করেছি। বর্তমানে সেখানে পুলিশ মোতায়েন আছে।
ওসি আরও বলেন, ‘বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা না হলে আমরাই আইনগত ব্যবস্থা নেবো। তিনি জানান, গত ২ নভেম্বর পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১২শ’ থেকে ১৩শ লোককে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’