স্থানীয় বাজারসহ রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় এ ফলের চাহিদা বেড়েছে। প্রচুর পুষ্টি গুণ সম্পন্ন এ ফল চোখকে সুস্থ রাখে, শরীরের চর্বি ও রক্তের কোলেস্টরেল কমায়। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। অধিকাংশ ফল ঢাকায় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে বিক্রি হয়। দেশে উৎপাদিত ড্রাগন ফল বিদেশে রফতানি হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
কৃষক বোরহান উদ্দীন জানান, ড্রাগন চাষে প্রথম বছর খরচ একটু বেশি হয়। পরের বছর থেকে খরচ নেই বললেই চলে। তিনি প্রথম বছর এক বিঘা জমিতে ৫৮০টি ড্রাগনের চারা রোপন করেন। সঠিক পরিচর্যা করায় ১৬ মাসে গাছে পরিপুষ্ট ফল আসে। তিনি জানান, পিলার, টায়ার, গোল আকৃতি করে লোহার রড় তৈরি, সেচ, সার, পরিচর্যা বাবদ তার প্রথম বছর দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল। প্রথম বছর তিনি প্রায় ৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি ফল চার শ’ থেকে আট শ’ টাকায় বিক্রি করেন। যশোর, ঢাকা, খুলনাসহ স্থানীয় বাজারে তিনি এ ফল বিক্রি করেন।
কৃষি উদ্যোক্তা স্বপন জানান, বালিয়াডাঙ্গা বাজারে তার একটি কীটনাশক ও বীজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। সেই সূত্রে একটি কোম্পানিতে চাকরি করা আব্দুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার পরামর্শে ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারা এনে ২৫ শতক জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। প্রতিটি চারা এক শ’ ২০ টাকা দরে কেনেন। ড্রাগন চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করে কংক্রিটের পিলার স্থাপন করতে হয়। একটি কংক্রিটের পিলারের চার পাশে চারটি চারা লাগানো হয়। পিলারের ওপরে একটি টায়ার বেঁধে দেওয়া হয়। এই টায়ারের ওপর ড্রাগনের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে থাকে। স্বপন জানান, অক্টোবর মাসে ড্রাগনের চারা লাগানো হয়। প্রায় ১৮ মাস পরে গাছে ফল আসে। ১ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষে ফল আসা পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়।
কালীগঞ্জের শ্রীরামপুর গ্রামের চাষী গোলাম কিবরিয়া জানান, তিনি ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের সানবান্ধা মাঠে ২০১৭ সালে ২ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করেন। প্রথম বছরে জমিতে মাটি ভরাট, চারা কেনা, রড, পিলার, টায়ার, বেড়া দিয় চারদিক ঘেরা, জৈব সার, রাসায়নিক সার, মজুরি বাবদ খরচ পড়েছে ৫ লাখ টাকা। পরের বছর পরিচর্যা ও লেবার খবর বাদে আর কোনও খরচ লাগেনি। এক বছর পর ৬ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেন। খরচ বাদে ওই বছর তার ১ লাখ টাকা লাভ থাকে।
তিনি জানান, ড্রাগন বিক্রির বড় বাজার হচ্ছে ঢাকা। এছাড়া খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহসহ স্থানীয় বাজারে তারা ড্রাগন ফল বিক্রি করে থাকেন। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ২০ টাকা দরে চারা বিক্রি করছেন। অনেকে তার কাছ থেকে চারা কিনে বাগান করছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে জেলার বিভিন্ন স্থানে চাষীরা ড্রাগন চাষে ঝুঁকছেন। ফল বিক্রেতা কৃঞ্চ পদ জানান, সাধারণ ক্রেতাদের কাছে ড্রাগন ফল অপরিচিত এবং দাম বেশি হওয়ায় অন্য ফলের তুলনায় বিক্রি কম হয়। তবে আগের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহিদুল করিম জানান, কালীগঞ্জের দুইজন চাষি ক্যাটকাস প্রজাতির এ ফলের চাষ প্রথম শুরু করেন। তাদের দেখাদেখি এখন অনেকে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। লাভজনক এ ফসলের চাষে আমরা তাদের প্রশিক্ষণসহ কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছি।