আ. লীগকে রাজপথের আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই: আব্দুর রহমান

যশোর পৌর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেছেন, বিএনপি রাজপথের আন্দোলন করে এতিমের টাকা মেরে খাওয়া খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চায়। তাদের বলি, খালেদা জিয়ার মুক্তি কেবল আদালতের মাধ্যমেই সম্ভব। আওয়ামী লীগকে রাজপথের আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে কোনও লাভ হবে না। আমরা সেই পথ রুদ্ধ করে দিয়েছি।

তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নে দিশেহারা হয়ে একটি অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টা করছে। তারা এই সরকারকে অকার্যকর বলার ধৃষ্টতাও দেখাচ্ছে। প্রয়োজনে আমরা ’৬২, ’৬৯ বা ’৭১-এর মতো আবারও রাজপথ প্রকম্পিত করে তাদের সেই অপচেষ্টা রুখে দেবো।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে যশোর পৌর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

পায়রা উড়িয়ে যশোর পৌর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন নেতারা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, কেনিয়ার জনগণ আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কীভাবে করা যায়। বারাক ওবামা তাদের বলেছিলেন, তোমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মসূচি দেখো। কীভাবে একটি দেশকে শূন্য থেকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেওয়া যায় তা কেবল শেখ হাসিনাই পারেন।

শুদ্ধি অভিযানের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নিজ ঘরেই এই অভিযান শুরু করে অনন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। তার সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণে দেশবাসী বিশ্বাস করে, তিনি যতদিন বেঁচে আছেন—সবাই তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই পেতে চান।

সম্মেলনে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীরা

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেন, শেখ হাসিনার প্রিয়ভাজন হচ্ছেন দলের কর্মীরা; নেতারা নন। ওয়ান ইলেভেনের সময় অনেক বড় বড় নেতা পালিয়ে গেছেন, গা ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু কর্মীরা তার মুক্তির দাবিতে রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন।

তৃণমূলকর্মীদের অবজ্ঞা করতে নিষেধ করে তিনি বলেন, আজ যারা বড় নেতা হয়েছেন, জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন- মনে রাখবেন, তৃণমূলের কর্মীরা না থাকলে আপনারা কিছুই না। তারাই নেতা জন্ম দেন, জনপ্রতিনিধি বানান।

তিনি বলেন, দলে বহু জাঁদরেল নেতা ছিলেন, কিন্তু তাদের ওপর থেকে যখন তার আশীর্বাদ উঠে গেছে, তখন তারা জিরো। ড. কামালের মতো নেতা আজ বিএনপির কোলে চড়েও কোনও গতি করতে পারেননি।

বক্তব্য রাখছেন সম্মেলনের বিশেষ অতিথি দলের কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন।

সম্মেলনের বিশেষ অতিথি দলের কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি আজ  গলাবাজি করছে, দেশের গণতন্ত্র নিয়ে। কিন্তু, তারা ভুলে গেছে—তাদের শাসনামলে বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেশকে তারা বিশ্বে পরিচিত করে। সেই অবস্থা থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। দেশের কৃষক এখন সার-কীটনাশকের দাবিতে রাজপথে গুলিতে মারা যাচ্ছে না। কৃষক এখন সার, বীজ, কীটনাশকের জন্যে হাহাকার করে না।

সম্মেলনে যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা বাস্তবায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে দেশে নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটেছে, স্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে।

বক্তব্য রাখেন যশোর সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর দেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছে।

তিনি সম্মেলনে আগামীতে যারা নির্বাচিত হবেন, তারা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রকাশ্য সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মজিদ, পৌরমেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রিন্টু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ প্রমুখ।

সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন।

সমাবেশের আগে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য যশোর পৌর কমিউিনিটি সেন্টারে দলের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়।