সুযোগ পেয়েও কলেজে ভর্তি হতে পারেনি হাছিনা

২১

চাঁদপুর শহরের লেডি প্রতীমা মিত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কমার্স বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেছে হাছিনা আক্তার। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য সুযোগ পেয়েছে চাঁদপুর ড্যাফোডিল কলেজে। কিন্তু ভর্তির টাকা আর পড়াশোনার খরচ না থাকায় ভর্তি হতে পারেনি সে। এরপর চাঁদপুর মহিলা কলেজে ভর্তি করাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন বাবা হানিফ। কিন্তু মেয়েকে ভর্তি করাতে পারেননি। তাই পড়ালেখার আশা ছেড়ে দিয়ে হাছিনা এখন সেলাই কাজ শেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর বাবা ভাবছেন বয়স ১৮ হলেই বিয়ে দিয়ে দেবেন।

হাছিনা বলেছে, ‘আমার সহপাঠীরা কলেজে পড়ছে, আর আমি বাড়িতে বসে আছি। গরিব ঘরে জন্ম নিয়েছি। চেয়েছিলাম চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হতে। কিন্তু তা হয়নি। বাবাও পড়ালেখার খরচ চালাতে পারছেন না। তাই এখন কলেজে ভর্তি হতে পারছি না।’

হাছিনার বাবা চাঁদপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ রঘুনাথপুর গ্রামের হানিফ বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। নিজে পড়ালেখা করতে পারিনি। কিন্তু সন্তানদের সবাইকেই পড়ালেখা করিয়ে মানুষ করতে চাই। বড় মেয়ে লেডি প্রতীমা স্কুল থেকে এবার এসএসসি পাস করেছে। আরেক মেয়ে ওই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট ছেলে এবার পিএসসি দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফুটপাতে কাঁচামাল বিক্রি করে প্রতিদিন আমার আয় হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। শহরে ২ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া থাকি। আমি প্রতিদিন যে টাকা ইনকাম করি, তা দিয়ে সংসারই ঠিকমতো চলে না। এরপর সন্তানদের পড়ালেখার খরচ। তারউপর বেশ কিছুদিন ধরে আমি অসুস্থ। তারপরও হাল ছাড়িনি। মেয়ে এসএসসিতে কমার্স থেকে ৩.৩৩ পেয়েছে। তবে কমার্সে পড়তে হলে প্রাইভেট পড়তে হয়। তাই খরচ কমানোর জন্য একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে মানবিক বিভাগে আবেদন করে। সে চাঁদপুর মহিলা কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। পেয়েছে ড্যাফোডিল কলেজে ভর্তির সুযোগ। সেখানে ভর্তি হতেই ৮ হাজার টাকা চেয়েছিল। এছাড়া সেখানে মাসিক বেতন এক হাজার টাকা। আমার তো টাকা-পয়সা নেই। যখন ওর ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তখন বিয়ের চিন্তা করবো।’

হাছিনার বাবার দাবি, দুবার আবেদনের পর পুরানবাজার কলেজে ভর্তি হতে অনেকের কাছে গিয়েছেন।  কিন্তু তারা বলেছেন- এখন আর ভর্তির সময় নেই।

তিনি বলেন, ‘শুনেছি রিলিজ হয়ে কোনও কোনও স্টুডেন্ট চলে যায়। সেই সুযোগে হলেও আমার মেয়েকে সরকারি মহিলা কলেজ অথবা পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজে পড়ার সুযোগ করে দিলে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে যেত না।’

ছাত্রী হাছিনার মা আমেনা বেগম। তিনিও ফুটপাতে সবজি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘স্বামীর ইনকাম কম। এর ওপর তিনি এখন অসুস্থ। এই অবস্থায় মেঝ মেয়ের স্কুলের বেতনই চালাতে পারছি না। আর বড় মেয়েকে ইন্টারে ভর্তি করানোর জন্য অনেকের কাছেই গিয়েছি। কিন্তু ভর্তি করাতে পারেননি। তাই এখন হাল ছেড়ে দিয়েছি।’

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, ‘ড্যাফোডিল পেয়েছে মেধার ভিত্তিতে। এখন তার যদি কোনও আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হয়, তাহলে ডিসি স্যার বরাবর আবেদন করলে হয়তো আর্থিক সহায়তা পাওয়া যেতে পারে।’

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, ‘ড্যাফোডিলে পড়তে অনেক টাকা প্রয়োজন হবে। এতো টাকা তো আর আমরা দিতে পারবো না। আমরা হয়তো তার ভর্তির টাকাটা দিতে পারি। তাছাড়া মহিলা কলেজ কিংবা অন্য কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।’