বেশি দামের জন্য অপরিপক্ব পেঁয়াজ বাজারজাত করছেন মাগুরার কৃষকরা

অপরিপক্ব অবস্থায় আগেভাগেই এই পেঁয়াজ তোলা হচ্ছে মাগুরায় মুড়িকাটা জাতের নতুন পেঁয়াজ উঠতে এখনও মাসখানেক বাকি। কিন্তু বাজারে বেশি দাম থাকায় অনেক কৃষক অপরিপক্ব অবস্থায় এখনই এই পেঁয়াজ তুলে বাজারজাত করছেন। এতে ফলন কম হওয়াসহ বীজের সংকট হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।  

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, জেলায় প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। জেলার চারটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় দুইশ হেক্টর আবাদ হয়েছে শ্রীপুরে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে। হেক্টর প্রতি পেঁয়াজের ফলন ১৫ মেট্রিক টনে দাঁড়াতে পারে। অর্থাৎ জেলায় পাঁচ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজের উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা ৪ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন। আশা করা হচ্ছে, জেলার চাহিদা মিটিয়ে পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকবে।

মাগুরা সদর উপজেলার রাঘবদাইড় গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘পেঁয়াজের বর্তমান বাজার মূল্য বেশি থাকায় একটি অসাধু চক্র অপরিণত পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রি করছে। আমি চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। বাধ্য হয়েই এ পেঁয়াজ রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি।’

শ্রীপুর উপজেলার বাড়ইপাড়ার কৃষক তহুর মোল্লা বলেন, ‘চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছি। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশা করছি ১১০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হবে। বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার দর বেশি। এই ‌পেঁয়াজ উঠতে এখনও প্রায় একমাস দেরি। তাই বেশি দরে বিক্রির আশা করছি না। পঞ্চাশ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারলেও আমার আয় দাঁড়াবে দুই লাখের উপরে।’

শ্রীপুর উপজেলার জোকা গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছরই বাজার দর চড়া থাকলেও পেঁয়াজ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই তা কমে যায়। আবার খুচরা বাজারে পেঁয়াজ যখন ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়, তখন আমরা পাইকারি বাজারে পাই ১৭-১৮ টাকা।  তাই বর্তমান চড়া মূল্য না পেলেও কমতে কমতে অন্তত ৩০ টাকা কেজি পাবো বলে আশা করছি।’

অপরিণত পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে সংগ্রহ প্রসঙ্গে মাগুরার কৃষি ও প্রকৃতি বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ‘পল্লী প্রকৃতি’র নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, ‘সাময়িক মুনাফার লোভে অনেক কৃষক অপরিপক্ব পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করছেন। এতে তাদের লাভ হলেও আগামী মৌসুমের জন্য তা বড় ধরনের সংকট তৈরি করবে। কৃষকদের বোঝানো প্রয়োজন যে, এখন অপরিণত পেঁয়াজ একটু বেশি দরে বিক্রি হলেও তা পরিমাণে কম হবে। এটি পরিপক্ব আকার ধারণ করার পর ওজনে বেশি হবে এবং অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে। এ বিষয়ে সরকার এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মহলকে ভূমিকা রাখতে হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘মাগুরায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠতে এখনও মাসখানেক লাগবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমরা এখন পেঁয়াজের বাম্পার ফলন প্রত্যাশা করছি।’

এ বিষয়ে জেলা মার্কেটিং অফিসার জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন বাজারে কড়া নজর রাখছি। এ পর্যন্ত কোথাও অপরিণত পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখিনি।’ অপরিণত পেঁয়াজ বিক্রি করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।