শ্রমিক আন্দোলনে পাটকল অচল

খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের ধর্মঘট পালনপাটখাতে প্রয়াজনীয় অর্থ বরাদ্দ, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করাসহ ১১ দফা দাবিতে দেশ জুড়ে ধর্মঘট পালন করেছে পাটকল শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ধর্মঘটসহ নানা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে খুলনা, রাজশাহী ও নরসিংদীর পাটকল শ্রমিকরা।

খুলনা

পাটকল শ্রমিকরা খুলনার ৯ পাটকলে ধর্মঘট পালন করেছেন। কারখানার গেটে অবস্থান, সভা ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদর যুগ্ম আহবায়ক মুরাদ হোসেন ধর্মঘট এবং শ্রমিক বিক্ষোভের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ৬ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে চতুর্থ দিন মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা থেকে মিলগুলোতে ধর্মঘট শুরু হয়।



খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের ধর্মঘট পালনখুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর ও দৌলতপুর, দিঘলিয়া শিল্পাঞ্চলের স্টার, আটরা শিল্পাঞ্চলের আলীম ও ইস্টার্ন এবং নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চলের কারপেটিং ও জেজেআইর শ্রমিকরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

রাজশাহী

রাজশাহীতে পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। সকাল থেকে পাটকলের উৎপাদন বন্ধ রাখে তারা। বিকেল ৪টায় মিল গেটে সমাবেশ করেন।রাজশাহীতে পাটকল শ্রমিকদের ধর্মঘট পালনরাজশাহী পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জিল্লুর রহমান জানান, ‘পাটকল শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। মজুরি ও বেতন না পেয়ে সংসার চালাতে পারছি না আমরা। শ্রমিকদের ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুই থেকে চার মাসের বেতন বকেয়া। বার বার আশ্বাস দেওয়ার পরও বিজেএমসি পাটকল শ্রমিকদের মজুরি কমিশন কার্যকর করেনি।’

নরসিংদী

নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিলের কয়েক হাজার শ্রমিক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ধর্মঘট পালন করেছে। ধর্মঘট কর্মসূচিতে শ্রমিক নেতারা বলেন, ‘২০১৫ সালে ঘোষণা দিয়েও মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে শ্রমিকরা। তারপর আবার ১০ সপ্তাহের বেতন বকেয়া রয়েছে। সেই সঙ্গে পিএফ’র টাকা প্রদান, বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণসহ ১১ দফা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি। এই দাবি সরকার না মানায় বাধ্য হয়ে আন্দোলন করছে শ্রমিকরা।’

নরসিংদীতে পাটকল শ্রমিকদের ধর্মঘট পালনএসময় ইউএমসি জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শফিকুল ইসলাম মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, নন-সিবিএ পরিষদের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ ঐক্য পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ৩ ডিসেম্বর ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট চলবে ৪ ডিসেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত।

পাটকল শ্রমিকদের ১১ দফা হচ্ছে
১. জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকর।
২. পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর সিদ্ধান্ত বাতিল।
৩. শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধ।
৪. উৎপাদন বিভাগের পিচরেট শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক বে-আইনী দফতর আদেশ প্রত্যাহার এবং ১৯৭৮ সালের ৫০ নং সার্কুলার এর ৫ ধারা পুনর্বহাল করা। 
৫. সকল মিল সটআপের অনুকূল শ্রমিক-কর্মচারীদের শুন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ।
৬. অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশাধ করা।
৭. চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বহাল করা।
৮. মৌসুমের শুরুতে পাটখাতে প্রয়াজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা।
৯. কৃষি শিল্পের ন্যায় সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান।
১০.ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট ২০১০ শতভাগ কার্যকর করা।
১১. রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ন্যায় অস্থায়ী ভিত্তিতে চালিত মিলগুলোর মজুরি-বেতন বৈষম্য বাতিল করে একই নিয়মে মজুরি ও বেতন প্রদান।