২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম রেজিস্ট্রার অফিসের বিভাগীয় পরিদর্শক নৃপেন্দ্র নাথ শিকদার অডিটের সময় সোনালী ব্যাংকের চালানের কপিগুলোয় অসংলগ্নতা দেখতে পান। এসময় তিনি সাবরেজিস্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমানকে অফিসে থাকা চালান কপিগুলো ব্যাংকে গিয়ে মিলিয়ে দেখার পরামর্শ দেন। মোস্তাফিজুর রহমান ব্যাংকে গিয়ে চালানের কপিগুলো মেলাতে গিয়ে জানতে পারেন ব্যাংকে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অনেক চালান জমা দেওয়া হয়নি। ইয়াছিন মিয়া সোনালী ব্যাংকের চালান কপিতে ভুয়া সিলমোহর ও স্বাক্ষর করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পরে সাবরেজিস্ট্রার অফিসে এসে ইয়াছিন মিয়াকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি কৌশলে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তার ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
জেলার বাঞ্ছারামপুরের মরিচাকান্দি ইউনিয়নের আতুয়াকান্দি গ্রামে ইয়াছিন মিয়ার বাড়ি। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ২৩ বছর আগে ইয়াছিন মিয়া সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিসে পিয়ন পদে চাকরিতে যোগ দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আশুগঞ্জ ও নাসিরনগর উপজেলায় বদলি করা হলেও ঘুরেফিরে তিনি সদর উপজেলায় ফিরে আসেন। তিনি সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নকল, তল্লাশি ও রেজিস্ট্রেশন ফিসহ চালানের টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দিতেন।
প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগম জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে ইয়াছিন মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর ইয়াছিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিসে পিয়ন পদে চাকরি পান। এরপর পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামে চার শতাংশ জায়গার ওপর তাকে তিনতলা একটি বাড়ি তৈরি করে দেন। সেই বাড়িতেই তিনি থাকেন। কয়েক মাস আগে তিনি তার বড় ছেলেকে ফ্রান্সে পাঠিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, তাকে বিয়ে করার ১০ বছর পর ইয়াছিন আকলিমা নামে এক বিধবা নারীকে মেয়েসহ বিয়ে করেন। ওই মেয়েকে ইতালি প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে বিয়েও দিয়েছেন। ইয়াছিন মিয়া তার মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে পৌর এলাকার পাইকপাড়ায় একটি ছয়তলা বাড়ি করেছেন।
আকলিমাকে বিয়ের পাঁচ বছর পর ইয়াছিন মকসুরা বেগমের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। পরে তাকেও বিয়ে করেন। পৌর এলাকার মুন্সেফপাড়ার একটি ফ্ল্যাট কিনে সেখানেই তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বাস করতেন ইয়াছিন। দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশের পর তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়েই গা ঢাকা দিয়েছেন ইয়াছিন।
ইয়াছিনের বাবা মোহন মিয়া জানান, ছেলের সঙ্গে তার তেমন যোগাযোগ নেই।
এ ব্যাপারে সদর সাবরেজিস্ট্রার মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, ‘এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। ইয়াছিন ব্যাংকের ভুয়া চালান কপির মাধ্যমে সরকারি বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অডিট শেষে টাকার পরিমাণ বলা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ইয়াছিন মিয়া যত চালান কপি সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়েছেন, তার সব পরীক্ষা করে দেখা হবে।’
এ ব্যাপারে সদর থানার উপপরিদর্শক সুমন চক্রবর্তী বলেন, ইয়াছিনের বিষয়ে জানতে তার দুই স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার তৃতীয় স্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তৃতীয় স্ত্রী ইয়াছিনের সঙ্গে পালিয়ে গেছেন।
আরও পড়ুন: