গত বছরের ৩ জানুয়ারি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার মৃত্যুতে চরম শূন্যতা ও অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে পরিবার ও কিশোরগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন।
দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন, সৈয়দ আশরাফ ছিলেন অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয় ব্যক্তি। বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের কাছেও তিনি ছিলেন এক মহান ব্যক্তিত্ব। তার সময়ে রাজনীতি চর্চারও ভালো পরিবেশ ছিল। বর্তমানে তারা সে পরিবেশ ও জায়গা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। সৈয়দ আশরাফ বেঁচে থাকলে দেশ গণতান্ত্রিক চর্চায় আরও এগিয়ে যেতো বলে মনে করছেন তারা।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচাতো ভাই ও কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু তার ভাই সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। বলেন, আশরাফ ভাই আমার বোনের কাছে বলেছিলেন, তিনি মারা গেলে তার লাশটা যেন যশোদল গ্রামে আমাদের দাদার কবরের পাশে দাফন করা হয়। কিন্তু আশরাফ ভাই মারা যাওয়ার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা বললেন, আশরাফ আমার ভাই। সে জাতীয় নেতা, তাই আশরাফ আমার কাছেই থাকবে। তাই তাকে যশোদলে দাফন করতে পারিনি।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, সৈয়দ আশরাফ উদার মনের মানুষ ছিলেন। তার জীবদ্দশায় আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনও বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক চর্চা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অনেক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত।
গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট দোলন ভৌমিক বলেন, সৈয়দ আশরাফ প্রথম দিকে প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। তাকে ঘিরে কিশোরগঞ্জে একটি উন্নয়নের বলয় তৈরি হয়েছিল। তবে সারা দেশেরই তিনি উন্নয়নের চিন্তা করতেন। সারা দেশকেই উন্নয়নের পথে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি অত্যন্ত গণতন্ত্রমনা ছিলেন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর পর কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে হাল ধরেছেন তারই ছোট বোন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি।
তিনি বলেন, আশরাফ ভাই ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি শুধু আমার ভাই নন, তিনি আমার পিতৃতুল্য। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে ভাইয়ের কাছে পিতৃস্নেহ পেয়েছি। তিনি আমার বাবার শূন্যতা পূরণ করেছেন। আমাদের তিনি যেমন শাসন করতেন, তেমনি উপদেশ দিয়ে সব বুঝিয়ে বলতেন। তিনিই আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। বড় ভাই বলতেন, শুধু একটা কথা মনে রাখবে, তোমার শরীরে কার রক্ত বইছে। তাহলে সবকিছু তোমার কাছে মসৃণ হয়ে যাবে।
সৈয়দ আশরাফ তার সহকর্মী ও সহযোদ্ধাদের যে কথাটি জোর দিয়ে বলতেন, তা হলো- ‘রাজনীতি করতে চাইলে দুর্নীতি ছাড়তে হবে। আর দুর্নীতি করলে রাজনীতি ছাড়তে হবে। প্রয়াত জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্মরণ করে এমন কথাই বলেছেন স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।
তাঁর মৃত্যুর পর জানাজায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন শোলাকিয়া ময়দানে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি মানুষের এমন হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আর তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নও দেখতে চান কিশোরগঞ্জবাসী।