স্কুল থেকে ফেরার পথে লাশ হলো হাসিব

মোরসালিন ইসলাম হাসিবের বাবার আহাজারি‘এ রকম ভালো বাবা কোথায় পাবো। আমি তাকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবো। তাকে যে ডাক্তার বানাবো।’ আর্তনাদ করতে করতে বলছিলেন মোরসালিন ইসলাম হাসিবের বাবা। ক্লাস শেষে ফেরার পথে ঘাতক নছিমন তার প্রাণ কেড়ে নেয়। নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ছিল সে। রবিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে নীলফামারী সদরের ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

হাসিবের বাড়ি ওই ইউনিয়নের সিংদই ছাড়ারপার গ্রামে। তার বাবা আব্দুর রাজ্জাক বাদশা সমাজসেবা অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।

রবিবার হাসিব ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে সদরের ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে গরু বোঝাই নছিমনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় ওই নছিমনের যাত্রী জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ পাঠানপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম (৪০) ও জাহিদ হোসেন (৫০) আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখান থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

হাসিবের দাদা আজিজুল হক (৫০) বলেন, ‘সকালে একসঙ্গে নাস্তা করে দাদুভাই স্কুলে যায়। কিছুক্ষণ আগে খবর পাই হাসিব মারা গেছে। সে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরবে এটা মেনে নিতে পারছি।’

বড় বোন রাজিয়া আকতার রিমু বলেন, ‘লেখাপড়ায় হাসিব খুব ভালো ছিল। সকালে দাদার সঙ্গে নাস্তা করে স্কুলে গিয়ে সে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো। ভাইকে ছাড়া আমরা কীভাবে বাঁচবো।’

তার মা হাসিনা বেগম আহাজারি করে কেঁদে বলেন, ‘আমার বুকের ধনকে এনে দাও। তাকে ডাক্তার বানাবো। আমার আশা পূরণ হতে দিল না ঘাতক নছিমন। আমি ঘাতকদের বিচার চাই।’ এভাবে ছেলের জন্য পাগলপ্রায় হয়ে প্রলাপ বকছেন হাসিনা বেগম। ছেলে বাড়ি ফিরবে। তাই খাওয়া জোগাড় করে বাড়িতে বসেছিলেন মোরসালিনের মা। কিন্তু যে ছেলেকে হাসিমুখে সকালে পাঠিয়েছিলেন স্কুলে, সে ফিরবে লাশ হয়ে এটি কী জানা ছিল তার। ছেলে হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।

নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘মোরসালিন বিদ্যালয়ের আষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। প্রভাতী গ-শাখায় তার রোল নম্বর ৫।’  তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অবৈধ এসব যানবাহনের কারণে আজকে একটি মেধাবী ছাত্রকে হারাতে হলো। অবিলম্বে এসব যানবাহন বন্ধ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি দেবো।’