বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার, কদর কমেছে বাঁশ ও বেত শিল্পের

22222

প্লাস্টিকের তৈরি আববাসপত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ ও বেত শিল্পের চাহিদা কমছে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্লাস্টিকের শো-রুমের সংখ্যা এবং কমে যাচ্ছে বাঁশ ও বেত শিল্পের সরঞ্জামাদির দোকান। ফলে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ছুটছেন অনেক বাঁশ ও বেতশিল্প কারিগররা। তবে হাতে গোণা কিছু কারিগর এখনও পৈর্তৃক পেশাকে ধরে রেখেছেন।

রাজশাহী নগরীর বহরমপুরের মদিনা কেইন ফার্নিচারের কারিগর ও মালিক নাজিমউদ্দিন জানান, তিনি বংশ পরম্পরায় এখানে আছেন। তার বাবাও বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর। তাদের আরেকটি দোকানও আছে। যেটা তার বাবা চালান। তার বাবার কাছ থেকেই তিনি কাজ শিখেছেন। আগে মোটামুটি বেচাবিক্রি হলেও এখন তেমন বিক্রি হয় না।

দোকানের কর্মচারী আসমা বেগম জানান, আমি ১৫ বছর থেকে কাজ করি। এখন দোকানে বেচাবিক্রির অবস্থা খুবই খারাপ। অনেক সময় কয়েকমাসের বেতন বাকি পড়ে যাচ্ছে। সংসার নিয়ে শহরে এভাবে চলা অনেক কষ্টের। এখানে হয়তো আর খুব বেশি দিন থাকবো না।

নগরীর হোসেনীগঞ্জের বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জানান, আগে এখানে বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের ১৫ থেকে ১৬টি দোকান ছিল। কিন্তু এখন দোকান মাত্র ৩টি। বেচাবিক্রি নাই বললেই চলে। সপ্তাহে হাতে গোণা কয়েকটি আসবাবপত্র বিক্রি করতে পারি। কোনও কোনও দিন বেচাবিক্রিই হয় না। 

11

রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকার নাজনীন সুলতানা জানান, আগে আমি বাঁশ ও বেতের শিল্পের আসবাবপাত্র দিয়ে ঘর সাজিয়েছি। কিন্তু বাঁশে ঘুণ ধরে ঘর নষ্ট হয়। এখন অল্প মূল্যে প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিল কিনেছি। ইদানিং প্লাস্টিকের আসবাবগুলো বিভিন্ন ডিজাইনে তৈরি করায় দেখতেও ভালো লাগছে।

বাঁশ ও বেত শিল্পের দূরাবস্থার জন্যে রাজশাহী বিসিক-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক তামান্না রহমান বলেন, ‘রাজশাহীতে বাঁশ ও বেতের কারিগর আছে কিন্তু তাদের তেমন বিক্রি হয় না। আমরা এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। আগে আমরা কুলা, ডালা, সরপোস ব্যবহার করতাম। এখন আমরা এগুলো প্লাস্টিকের ব্যবহার করি। এখন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। জনসাধারণকে প্লাস্টিক বর্জন করে দেশি জিনিস নিতে হবে। প্লাস্টিক তো মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে। কিন্তু এখন এটাও একটা শিল্প হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, আসলে প্লাস্টিকের সঙ্গে যুদ্ধে আমরা পারছি না। এখন যারা এখানে আছেন, তাদের আমরা ট্রেনিং দিতে পারি। অন্য জেলায় যেখানে বাঁশ বেত শিল্প ভালো করছে, সেই পণ্যগুলো দেখাতে পারি; কিংবা ছোটখাট ঋণ দিতে পারি।’