এ বছর সাড়ে ৭ লাখ কর্মী বিদেশ পাঠাতে চায় সরকার

সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শাহীনসহ অন্যরাসরকার দক্ষ করে বিদেশে কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শাহীন। তিনি বলেন, ‘এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাড়ে ৭ লাখ কর্মী পাঠানোর টার্গেট নিয়েছে সরকার। এ জন্য দক্ষকর্মী তৈরিতে ৬৪টি গারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও ৬টি আইএমটিতে ৫৫টি চাকরিযোগ্য ট্রেডে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে সেন্ট্রাল ডাটা ব্যাংক থেকে বাছাই করে দক্ষকর্মী বিদেশে পাঠানো হবে।’

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নাটোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপসচিব। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দিনব্যাপী আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আশরাফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ।
মো. শাহীন বলেন, ‘বিদেশ যেতে আগ্রহীদের জাপানি, কোরিয়ান, আরবি ও ইংরেজি ভাষা শেখানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারিভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে কর্মীদের খরচ হবে মাত্র ৯৭ হাজার ৭৮০ টাকা থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তবে জাপানে যেতে কর্মীদের কোনও খরচ হবে না।’
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জানান, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৩টি দেশে এক কোটি ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের আমলে বিগত ১০ বছরে ৬৬ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৪ জনের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে; যা এ পর্যন্ত মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৬০ ভাগ।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৫০ শতাংশ দাবি করে তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।’
বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে উপসচিব বলেন, ‘আগের মতো অদক্ষ কর্মীর চাহিদা এখন আর বিদেশের শ্রমবাজারে তেমন নেই। অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে দালালের মাধ্যমে ফ্রি ভিসা বা ভিসা ট্রেডিং নামে বিদেশে গিয়ে কাজ পাওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কর্মীদের মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় জাপান বা কোরিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা বেশি করা উচিত। কেননা, এই দুই দেশে গিয়ে একজন দক্ষকর্মী মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনও অদক্ষ কর্মীর তুলনায় ৫-৬ গুণ বেশি টাকা আয় করতে পারবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে উপসচিব আরও বলেন, ‘দালালদের মাধ্যমে বিদেশে যেতে অনেক টাকা খরচ হয়; অথচ সরকারের সহযোগিতায় দক্ষ হয়ে বাহরাইনে ৯৭ হাজার ৭৮০ টাকা এবং সৌদি আরবে যেতে ব্যয় হবে সর্বোচ্চ এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তবে সম্প্রতি কম্বোডিয়া, চীন, জাপান, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও বসনিয়া হারজেগোভিনায় নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট টোকিওতে জাপান সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের নতুন শ্রম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ভিত্তিতে জাপান সরকার ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ১৫টি ক্যাটাগরিতে স্পেসিফিক স্কিল ওয়ার্কার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য জাপানি ভাষায় দক্ষতা এন-ফোর লেভেল এবং কাজ করার দক্ষতা থাকতে হবে।’