ওসমানী হাসপাতালের আক্রান্ত চিকিৎসকের সহকর্মীরা এখনও দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা!




ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর অন্যান্য চিকিৎসকরা করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে আক্রান্ত চিকিৎসকের সংস্পর্শে আসা ওই ইউনিটের অনেক চিকিৎসকই এখনও দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টিন করা হয়নি। কর্মরত চিকিৎসকরা এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ এখনও কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে কাজ করছেন চিকিৎসক ও সেবাদানকারী কর্মীরা।

এদিকে চিকিৎসকের করোনা আক্রান্তের তথ্য জানার পর মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির সংখ্যাও কমে গেছে।

মেডিসিন ইউনিটে কর্মরত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের অনেকেই আক্রান্ত চিকিৎসকের সঙ্গে কাজ করেছি। বর্তমানে অনেকেই এখনও চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, যা সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ এখনও আমাদের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি।’

তবে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাসপাতালের একজন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ইতোমধ্যে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়াও পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি রয়েছে। এগুলোও একটা সিদ্ধান্ত।

পর্যবেক্ষণে কতজন চিকিৎসক রয়েছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখন বলা মুশকিল। চিকিৎসকদের নিয়মিত কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ কেউ বিশ্রামে আছেন। আক্রান্ত চিকিৎসক যে ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেই ওয়ার্ড সচল আছে। চিকিৎসকরাও সেখানে সেবা দিচ্ছেন।

এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসক অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, চিকিৎসকের বর্তমান অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। উনার জ্বর কমে গেছে। ভাইরাসের কারণে সর্দি ও কাশি কিছুটা আছে।

তিনি আরও জানান, সিলেট শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনাভাইরাস সন্দেহে সাত জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের রিপোর্ট এখনও আসেনি।

ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশনা কিংবা সিদ্ধান্ত আছে কিনা জানতে চাইলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম (সার্বিক) বলেন, এসব বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না। হাসপাতালের পরিচালক এসব বিষয়ে বলতে পারবেন। তবে হাউজিং এস্টেট এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত লকডাউন থাকবে।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল জানান, চিকিৎসকের কেস হিস্ট্রি দেখে জানা যায় তিনি কোনও বিদেশির সঙ্গে দেখা করেছেন অথবা বিদেশি কেউ তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তার পুরো পরিবার এখন হোম আইসোলেশনে আছে।

জানা যায়, সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেডিসিন বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপক কয়েকদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হন। হাসপাতাল ছাড়াও তিনি নগরীর সোবহানীঘাট এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখতেন। এছাড়া তিনি প্রতিদিন সকালে হাউজিং এস্টেট এলাকায় মর্নিংওয়াক (ব্যায়াম) করতেন। তবে রবিবারের (৫ মার্চ) কয়েকদিন আগে থেকেই তাকে স্থানীয়রা মর্নিংওয়াক করতে দেখেননি। মেডিসিন বিভাগের ওই চিকিৎসক কোনও প্রবাসীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।