ডাকাতির গুজবে মাইকিংয়ের পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়

ডাকাতির মাইকিং শুনে রাস্তায় নেমে আসে হাজারো লোকজনমাদারীপুরে মঙ্গলবার রাতে গ্রামে গ্রামে ডাকাতির গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন এলাকার মসজিদে মসজিদে মাইকিং করার পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়। পরে পুলিশ জেলার বিভিন্ন এলাকায় টহলে নামে। গত বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) থেকে মাদারীপুরে লকডাউন চলছে। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় মাদারীপুরের কুনিয়া ও রাজৈরের টেকেরহাট থেকে। মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের এক তরুণ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে পাশের কুনিয়া এলাকা ঘুরতে গেলে তাকে স্থানীয়রা চ্যালেঞ্জ করে আটকে রাখে। এরপর ডাকাত ধরা পড়েছে বলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এছাড়া রাজৈরের টেকেরহাট স্বরমঙ্গল এলাকা থেকে চার তরুণকে ডাকাত সন্দেহে স্থানীয়রা আটক করে। ডাকাত ধরা পড়েছে বলে তাদের ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে উভয় স্থান থেকে পাঁচ জনকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে ডাকাতি সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

এরপর রাত ৮টার পর থেকেই মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিংয়ে ডাকাতির খবর ছড়িয়ে পড়ে। সদরের বাহাদুরপুর, শিরখাড়া দুধখালী, রাজৈরের ইশিবপুর, কবিরাজপুর, টেকেরহাট, এমনকি শিবচরের বহেরাতলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানেও এমন মাইকিং হয়েছে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বদরুল আলম মোল্লা বলেন, ‘রাতে মসজিদ মসজিদে মাইকিং করে ডাকাতি হচ্ছে এই ঘোষণা পেয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে মঙ্গলবার রাতে মাদারীপুর জেলার কোথাও কোনও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। আটককৃত পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ও তাদের বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে এখনও ডাকাতির সংশ্লিষ্ট কোনও বিষয় জানা যায়নি। তবে পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে এবং সাধারণ জনগণকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। রাতে করোনা পরীক্ষার কথা বলে পুলিশ বা স্বাস্থ্যকর্মী পরিচয়ে কেউ বাড়িতে গেলে দরজা না খুলে জেলা পুলিশকে বা ৯৯৯ এর কল দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।’

দেশের সর্ব প্রথম এলাকা হিসেবে গত ১৯ মার্চ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়। করোনা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে অবশেষে গত বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) থেকে পুরো জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। 

উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কয়েকটি মসজিদ থেকে ‘ডাকাত পড়েছে’ এমন মাইকিং করা হয়। পরে তা কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এক এলাকার মসজিদের মাইকিং শুনে অন্য এলাকাগুলোর মসজিদ থেকে তা প্রচার করায় পুরো জেলাতে বিষয়টি ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি। যদিও পুলিশ জানিয়েছে মুন্সীগঞ্জে সেদিন ডাকাতির কোনও ঘটনাই ঘটেনি। কিন্তু, লকডাউন পরিস্থিতির ভেতরে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে পুরো জেলার মানুষ। পুলিশ আরও জানায়, লৌহজং ও শ্রীনগরের দিকে বিল এলাকায় কিছু মানুষ টর্চের আলো ফেলে রাতে মাছ ধরতে গিয়েছিল। তাদের ডাকাত মনে করেই প্রথমে মসজিদের মাইকে ওই ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে তা জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।