হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের ডায়ালাইসিস ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার দুই শতাধিক কিডনি রোগী আছেন, যারা আগাম টাকা জমা দিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাদের প্রতি সপ্তাহে অন্তত চার দিন ডায়ালাইসিস করার জন্য আসতে হয়। এ ছাড়াও নতুন রোগী তো আছেই। কিন্তু ২৫টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে ২০টি বিকল হওয়ায় তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি দু-তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ডায়ালাইসিস করার জন্য। এতে কিডনি রোগীরা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তার ওপর মেশিন সচল রাখার জন্য পানি ফিল্টারিং করার মেশিন বেশিরভাগ সময় কাজ করে না। এতে পানির অভাবে ডায়ালাইসিস মেশিন কাজ করে না। ফিল্টার মেশিনে যেখানে ঘণ্টায় ১০ লিটার পানি সরবরাহ করার কথা সেখানে করছে চার থেকে পাঁচ লিটার। এভাবেই কোনও রকমে চলছে ডায়ালাইসিস বিভাগটি।
সরেজমিন ওই ওয়ার্ডে দেখা গেছে, ডায়ালাইসিস মেশিনের ২৫টির মধ্যে ২০টি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। পাঁচটি সচল থাকলেও দুটি মাঝে মাঝে চলে বন্ধ হয়ে যায়। মূলত তিনটি মেশিন চলছে। চিকিৎসকরা বলছেন, একজন কিডনি রোগীর কমপক্ষে চার ঘণ্টা ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিন্তু মেশিনের অভাবে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে।
ডায়ালাইসিস সেবা নিতে আসা আসা গাইবান্ধার মুক্তিযোদ্ধা আউয়াল উদ্দিন জানান, দেড়-দুই ঘণ্টা ডায়ালাইসিস করে তারা বলছে মেশিন নেই। ফলে পরিমাণ মতো ডায়ালাইসিস করাতে না পারায় শ্বাসকষ্টসহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে রোগীদের। তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের মেরে ফেলার চক্রান্ত ছাড়া কিছুই নয়। তা না হলে মেশিনগুলো সচল করা হচ্ছে না কেন?’
একই কথা জানালেন নীলফামারীর জলঢাকা থেকে আসা আসমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমাদের দিকটা কেউ দেখে না। সিরিয়াল দিয়ে দু-তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়। মেশিন না থাকায় আমাদের ঠিকমতো ডায়ালাইসিস না করেই বিদায় করে দেওয়া হয়। এভাবে চললে আমরা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবো।’
রংপুর নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার কলেজছাত্রী আকলিমা জানালেন একই কথা। তিনি বললেন, ‘ঠিকমতো ডায়ালাইসিস করতে না পারায় আমার শ্বাসকষ্টসহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তব্যরত নার্স ও ব্রাদার স্বীকার করলেন, যেভাবে ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে সেটা কোনও রকম বেঁচে থাকা। তারা জানালেন, বেশিরভাগ ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট। কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এছাড়াও পানি ফিল্টারিং মেশিনও কাজ করছে না। এভাবে কিডনি রোগীদের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রাখতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার চেম্বারে গেলে তিনি বেশ কয়েকটি ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ কবে নাগাদ সচল করা যাবে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
এই হাসপাতালের ডায়ালাইসিস মেশিনগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা না হলে অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন– এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।