দাকোপ উপজেলার বাজুয়ার তরমুজের সুনাম দেশ জুড়েই রয়েছে। গত ৩০ বছর ধরে দাকোপের পাঁচটি ইউনিয়ন দাকোপ, কৈলাশগঞ্জ, লাউডোব, বানিশান্তা ও বাজুয়ায় তরমুজ চাষ শুরু হয়। তরমুজ চাষে বেশ লাভ, তাই বাজুয়ার দেখাদেখি বর্তমানে বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, রূপসা উপজেলাতেও তরমুজ চাষ হয়েছে। তরমুজের পাশাপাশি ঢেড়শ, মরিচ, বেগুন, করলা, ঝিঙে, বাংগি, তিল, মিষ্টি কুমড়ার চাষও হয়ে থাকে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দাকোপ উপজেলার ৩৩ নম্বর পোল্ডারের পাঁচটি ইউনিয়নে লক্ষ্যমাত্রার বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। অথচ করোনাভাইরাসের কারণে কৃষক তরমুজের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বছর পাঁচ হাজার ৭৩২ জন চাষি তরমুজ চাষ করেছেন। ৩৩ নম্বর পোল্ডারের বাজুয়া, দাকোপ, কৈলাশগঞ্জ, লাউডোব ও বানিশান্তা ইউনিয়নে গত বছর এক হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।
কৃষক গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, 'তরমুজ ট্রলার ও ট্রাক ভরে বিভিন্ন বাজার ও ঢাকায় নেওয়ার সময় এক শ্রেণির দালালদের টাকা দিতে হয়। তবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এ বছর চাষিদের সেটা দিতে হচ্ছে না। কিন্তু লকডাউনের মধ্য বাজারজাত করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
কৃষক ফণি ভূষণ মন্ডল জানান, তিনি ৩০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ফলন খুব ভালো হয়েছে। চাষ করতে খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ৮-৯ লাখ টাকা। এখনও তরমুজ রয়েছে।
পশ্চিম বাজুয়ার কৃষক শ্রীকান্ত রায় বলেন, '১৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করতে আমার খরচ হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার টাকা। বিক্রি করেছি সাড়ে ৪ লাখ টাকা। তবে যে পরিমাণ তরমুজ তাতে আরও বেশি ঢাকা পেতাম করোনা না এলে।’
তরমুজ ব্যবসায়ী সামছুর হাওলাদার জানান, এ বছর দাকোপে তরমুজের ফলন ভালো। তিনি প্রতি বিঘা জমির তরমুজ ৪০-৫০ হাজার টাকায় কিনছেন। তিনি জানান, এ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকলে আরও বেশি দামে তরমুজ বিক্রি হতো।
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান জানান, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে বাজার দর কম। গত বছর এক বিঘা জমির তরমুজ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আর এ বছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ হলো দাকোপে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, দাকোপে এ বছর ৭০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু চাষ হয়েছে এক হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে। স্বাভাবিক পরিবেশ থাকলে দাকোপে এ বছর ৫০০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হতে পারতো। কিন্তু করোনার কারণে চাষিদের লাভ কম হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, করোনার কারণে খুলনার বাইরের ব্যাপারীদের দাকোপে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আর এলাকায় তরমুজ ব্যাপারীদের ডাক্তারের সনদ নিয়ে ঢুকতে হচ্ছে। আর চাষিরা করোনার সব ধরনের নির্দেশনা যাতে মেনে চলেন সে প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।