বেতাগীতে ৬ দিনে ডায়রিয়ায় ৪ জনের মৃত্যু

বেতাগী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরাকরোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বরগুনার বেতাগীতে ডায়রিয়ায় নতুন করে ইদ্রিস খলিফা (২৮) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনের ব্যবধানে ডায়রিয়ায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। অনেকে আবার করোনা সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতালে আসছেন না। শনিবার (২ মে) বিকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. তেন মং। তিনি জানান, মৃত ইদ্রিস খলিফা উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের দারুল উলুম গ্রামের আব্দুর রব খলিফার ছেলে।

বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত মোট ১৫৫ জন ডায়রিয়া রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২৫ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৩০ জন। প্রতিদিনই ১৫-২০ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। হাসপাতালে খাবার স্যালাইনের সংকট না থাকলেও কলেরা স্যালাইনের সংকট রয়েছে বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনার বেতাগী উপজেলার প্রায় দেড় লাখের মতো মানুষের চিকিৎসার একমাত্র কেন্দ্র বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সম্প্রতি ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত এক রোগী ভর্তি ছিল। এর পরপরই একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার করোনা পজিটিভ হওয়ার সংবাদে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে পুরো উপজেলা জুড়ে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আতঙ্কে অনেকেই হাসপাতাল বিমুখ। তাই ডায়রিয়া আক্রান্ত অনেকেই হাসপাতালে না এসে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নে শতাধিক, মোকামিয়া ইউনিয়নে অর্ধশতসহ প্রায় উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বাড়িতে অবস্থান করছে।

উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম রব শুক্কুর বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক রোগী ডাইরিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু তারা করোনার ভয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন না। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

বিবিচিনি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী মনি আক্তার বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু বাস্তবে তা কাজে আসছে না। করোনার ভয়ে হাসপাতালে যেতে তারা অনিচ্ছুক।

বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. তেন মং বলেন, ঋতু পরিবর্তন ও দূষিত পানি ব্যাবহারের ফলে গত কয়েকদিন ধরে লোকজন ডায়রিয়া ও পেটের পীড়াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। খাবার স্যালইনের সংকট না থাকলেও কলেরা স্যালাইনের সংকট ছিল। তবে এ সংকট সমাধানে ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহিন খান বলেন, বরগুনার বেতাগীতে ডায়রিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটা যেহেতু খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ তাই মানুষকে সচেতন করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির খারাপ অবস্থা হলে হাসপাতালে নিয়ে আসে সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কলেরা স্যালাইনের যে সংকট ছিল, তা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও স্যালাইন সরবরাহ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।