নেত্রকোনায় বাড়ছে করোনা রোগী, কমছে সামাজিক দূরত্ব!

নেত্রকোনা শহরের বিভিন্ন সড়কে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এভাবেই চলাচল করছে সাধারণ মানুষদেশে বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণের হার। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ১৬২ জন, আর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। নেত্রকোনা জেলাতেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের রোগী বেড়েই চলেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা অনেকটাই অসচেতন। চলাচলে অসতর্কতা এবং সামাজিক দূরত্ব ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি কেউ সঠিকভাবে মেনে চলছেন না। সাধারণ মানুষ হাঁটবাজার, দোকানপাট ও রাস্তাঘাটে অবাধে চলাচল করছেন। এতে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা।

এরই মধ্যে জেলায় চিকিৎসক, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ আক্রান্ত হয়েছেন ৮৭ জন। এরপরেও বেপরোয়াভাবে চলাচল যনে থামছেই না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কথা বলা হলেও, স্থানীয়রা তা সঠিকভাবে মেনে চলছেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও করোনা পরিস্থিতিতে নির্দেশনা মেনে চলতে নেওয়া হয়নি কোনও কঠোর পদক্ষেপ।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নেত্রকোনায় ব্যাংকিং কার্যক্রম জানা যায়, গত ১০ মে থেকে মার্কেট ও দোকানপাট খোলার পর থেকেই শহরে সাধারণ মানুষের চলাচল বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষের চলাচলে সামাজিক দূরত্ব মানার কোনও বালাই দেখা যায়নি। তাই জেলায় করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির শুরুতে নেত্রকোনায় সরকারি-বেসরকারিভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শহরে জীবাণুনাশক ছেটানোর কর্মক্রম পরিচালিত হয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিজিবি, সেনাবাহিনী, পৌর প্রশাসন, রেটক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ অনেক রাজনৈতিক দল এসব কার্যক্রমে অংশ নেয়। তবে দিনদিন জেলায় রোগীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্থানীয় সরকারের সচেতনতা কার্যক্রম।

শুরুতে প্রায় প্রতিদিনই নেত্রকোনা পৌরসভা থেকে শহরের বিভিন্ন সড়ক ও পাড়া মহল্লায় জীবাণুনাশক ছেটানো হয়। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে পৌর এলাকায় এ ধরনের কার্যক্রম দেখা যায়নি।

করোনা পরিস্থিতিতেও নেত্রকোনার দোকানপাটে ক্রেতাদের ভিড়এ বিষয়ে নেত্রকোনা পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম খান জানান, শুরুর দিকে দুই মাস আমি ব্যক্তিগত দুটি ট্রাক দিয়ে জীবাণুনাশক ছিটিয়েছি। তবে এখন ওই ব্যক্তিগত কার্যক্রমটা বন্ধ। তবে পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরের অলিগলিতে দিনে একবার এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা কার্যক্রম ও ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের নেত্রকোনার সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল বলেন, জীবাণুনাশক ছেটানো বন্ধ করা ঠিক হয়নি। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে কিছুটা হলেও ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতো। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মানুষ অবাধে চলাচল বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

নেত্রকোনায় করোনা পরিস্থিতিতেও চলছে কেনাকাটামার্কেট ছাড়াও নেত্রকোনার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বিমা ও অফিসেও সামাজিক দূরত্বের কোনও নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। একে অন্যের কাছাকাছি গাদাগাদি করে লেনদেন চলছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের মোড়ে মোড়ে টহল রয়েছে, তবে শহরে রিকশাসহ অন্যান্য যান চলাচল অব্যাহত আছে।

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, এই সমস্যা নিরসনের জন্য আমরা বৃহস্পতিবার জেলার ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করবো। পরে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়াও পৌরসভার পক্ষ থেকে জীবাণুনাশক ছেটানোর কার্যক্রম চলমান আছে ও থাকবে।