সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কের জের: নারী পুলিশের মৃত্যু, কনস্টেবল স্বামী আটক

ঝালকাঠি

সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কের জের ধরে পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে ঝালকাঠি পুলিশ লাইন্সে কর্মরত নাদিয়া আফরিন নামের একজন নারী কনস্টেবল বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এরপর একই স্থানে কর্মরত তার স্বামী কনস্টেবল তরিকুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তরিকুলের মা। তবে কনস্টেবল ফরহাদকে নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত হলেও তিনি নিজ পদে কর্মস্থলেই আছেন বলেও জানা গেছে।

শেবাচিম হাসপাতালে ডিউটিরত পুলিশ কর্মকর্তা মো. নাজমুল জানান, নাদিয়া আফরিন বিষপানে অসুস্থ হলে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। পরে তাকে ভর্তি করে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু ঘটে।

নাদিয়ার শাশুড়ি ও কনস্টেবল তরিকুলের মা জেসমিন বেগম বলেন, 'নাদিয়া তরিকুলের ব্যাচমেট ছিল। ঝালকাঠি পুলিশ লাইন্সে পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের আগে নাদিয়ার সঙ্গে আরেক ব্যাচমেট কনস্টেবেল ফরহাদের সম্পর্ক ছিল। তাই নাদিয়ার বিয়ে মানতে পারেনি ফরহাদ। ফরহাদ তাদের পূর্ব সম্পর্কের প্রমাণাদি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল নাদিয়াকে। এসব নিয়ে তরিকুল ও নাদিয়ার মধ্যে কলহ চলছিল। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার সকালে কলহ শুরু হলে পুলিশ লাইন্সের আরআই তাদের ব্যারাকে নিয়ে যায়, পরে বিকালে খবর পাই যে নাদিয়া বিষপান করেছে এবং তরিকুল আত্যহত্যার চেষ্টা করলেও বেঁচে যায়। নাদিয়ার মৃত্যুর পর তরিকুলকে আটক করা হয়।'

শুক্রবার (১৫ মে) কনস্টেবল ফরহাদের মোবাইলে নম্বরে ফোন করা হলে প্রথমে নাদিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে অন্য একজনকে ফোন ধরিয়ে দেন। সে সময় দ্বিতীয় ব্যক্তিও নিজেকে ফরহাদ দাবি করে বলেন, 'নাদিয়ার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক ছিল না।' এই প্রতিবেদকের কাছে সব ডকুমেন্ট আছে জানালে তিনি বলেন, 'কোনও ডকুমেন্ট নেই'।

এ বিষয়ে কনস্টেবল তরিকুল বলেন, 'বিয়ের পরে জামালপুরে এসআই পদে কর্মরত নাদিয়ার এক ফুপু নাদিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন আমাকে।' তরিকুল ফোনে কথা বলার সময় তার আশেপাশে কয়েকজনের কথা শোনা যায়, তারা তাকে ফোন রেখে দিতে বলেন, এরপরই ফোনের লাইন কেটে যায়।

পরবর্তীতে তরিকুল জানান, কনস্টেবল ফরহাদের কাছে আগের সম্পর্কের কিছু ডকুমেন্ট থাকায় প্রায়ই নাদিয়াকে ব্লাকমেইল করছিল। ফরহাদ কিছু ছবি অন্যান্য সহকর্মীর কাছে ছড়িয়ে দিলে লজ্জায় আত্মহত্যা করে নাদিয়া। পুলিশ লাইন্সেই নাদিয়া বিষপান করেছে এবং সিসিটিভ ফুটেজে এর প্রমাণ আছে বলেও দাবি ফরহাদের।

ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এমএম মাহামুদ হাসান জানান, গত দুদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে নারী কনস্টেবলের পারিবারিক কলহ চলছিল। এর জেরেই নাদিয়া বৃহস্পতিবার বিকালে সদর থানার অদূরের বাসায় বিষপান করেন। প্রতিবেশীদের কাছে খবর পেয়ে স্বামী ছুটে গিয়ে উদ্ধার করে প্রথমে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।