ডা. রকিব হত্যা: খুলনায় চিকিৎসাসেবা বন্ধের ঘোষণা

মানববন্ধনমৃত রোগীর স্বজনদের হামলায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) আজীবন সদস্য ডা. মো. আব্দুর রকিব খানের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন খুলনার চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় বুধবার (১৭ জুন) খুলনা বিএমএ জরুরি সভা ও শহীদ ডা. মিলন চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও খুলনা সদর থানার ওসি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সব চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকবে। কেবল কোভিড-১৯ (করোনা) হাসপাতাল ও খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি সেবা চালু থাকবে বলে জানান চিকিৎসকরা।

খুলনা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে চিকিৎসকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিএমএ’র জরুরি সভায় চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুলনার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসক ও পরিচালকরাও বিএমএ’র এ কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা চিকিৎসক হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান। এ সময় অভিযোগ ও মামলা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করায় খুলনা সদর থানার ওসির প্রত্যাহার দাবি করেন তারা। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে চিকিৎসকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান।

এদিকে জরুরি সভায় খুলনা বিএমএ, বিপিএমপিএ ও বিপিএইচসিডিওএ অফিসসহ সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন এবং সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কালো ব্যাজ ধারণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভায় খুলনা বিএমএ’র সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. মামুনূর রশিদকে আহ্বায়ক, ডা. মো. সওকাত আলী লস্করকে যুগ্ম আহ্বায়ক, ডা. সুমন রায়কে সদস্য সচিব এবং ডা. ইউনুছ উজ্জামান খাঁন তারিম, ডা. দেবনাথ তালুকদার রনি, ডা. এস এম তুষার আলমকে সদস্য করে আন্দোলন মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়।

খুলনা বিএমএ সভাপতি ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে খুলনা বিএমএ’র প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক ডা. সুমন রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখের খুলনা বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ, যুগ্ম সম্পাদক ডা. বঙ্গ কমল বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. মামুনূর রশিদ, কার্যকরী পরিষদের সদস্য ডা. ইউনুছ উজ্জামান খাঁন তারিম, ডা. দেবনাথ তালুকদার রনি, খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. রাশেদা সুলতানা, খুলনা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আহাদ, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সি মো. রেজা সেকেন্দার, খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ, খুলনা বিপিএমপিএ ও বিপিএইচসিডিওএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সওকাত আলী লস্কর প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ১৫ জুন খুলনা বিএমএ’র আজীবন সদস্য বাগেরহাট ম্যাটসের অধ্যক্ষ ডা. মো. আব্দুর রকিব খান (৫৯) তার হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলেন। আগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর স্বজনরা তাকে কৌশলে বাইরে ডেকে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত জেনে ফেলে রেখে যায়। পরে ক্লিনিকের স্টাফরা তাকে প্রথমে গাজী মেডিক্যাল কলেজ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৬ জুন দুপুরে দ্রুত তাকে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আরও পড়ুন:

ডা. রকিব হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের, গ্রেফতার ১
খুলনায় রোগীর স্বজনদের হামলায় ক্লিনিক মালিক নিহত