৬১ লাখ টাকা ফেরত

সততার পুরস্কার হিসেবে সজীব পেলেন অটোরিকশা

সততার পুরস্কার হিসেবে চালক সজীবের হাতে তুলে দেওয়া হলো অটোরিকশার চাবি।

চাঁদপুর শহরে অটোরিকশায় ফেলে যাওয়া ৬১ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ায় ওই বাহনটির চালকের সততায় মুগ্ধ হয়েছেন বিকাশ এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল। তাই ‘ভালো কাজের’ পুরস্কার হিসেবে চালক সজীবকে একটি অটোরিকশা উপহার দিয়েছেন তিনি। গত ২২ জুন টাকা উদ্ধারের সময় জেনেছিলেন অটোটি ভাড়ায় চালাতেন সজীব, তাই তাকে নিজের রোজগারের পথ করে দিয়েছেন তিনি।

২৪ জুন বুধবার পুলিশের মাধ্যমে সজীবকে এ উপহার দেন বিকাশ এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল।

আলমগীর হোসেন জুয়েল বলেন, ওই যুবকের সততা এবং পুলিশের সহযোগিতায় আমি টাকাগুলো ফেরত পেয়েছি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তাকে চাকরি অথবা অটোরিকশা উপহার দেবো। তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাকে ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে উপহারস্বরূপ একটি অটোরিকশা কিনে দিয়েছি। এটি চাঁদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ চৌধুরীর মাধ্যমে তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, আজ দুপুরে আমাদের মাধ্যমে অটোচালকের কাছে একটি অটোরিকশার চাবি ও কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের অফিস সহকারী বাদল গাজীকে ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, এটিকে আমরা সততার মূল্য বলছি না। সততার মূল্য নির্ধারণ করা যায় না। আমরা এটিকে বলছি ভালো কাজের পুরস্কার।

প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিকাশ এজেন্টের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার মাসুদ হোসেন, মানি রানার মোক্তার হোসেন ও সুপারভাইজার সেলিম শহরের ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ৬১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ব্যাংক থেকে নেমে ব্যাগভর্তি সেই টাকা নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় উঠে শহরের জোড় পুকুরপাড় এলাকায় আসার পর ভুলক্রমে অটোরিকশাতেই টাকাগুলো রেখে নেমে যান তারা। প্রায় আধঘণ্টা পর মাসুদ বুঝতে পারেন টাকার ব্যাগটি তিনি অটোরিকশায় ফেলে এসেছেন।

এদিকে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে ওই অটোরিকশা ও তার চালককে খুঁজতে থাকেন তারা। তবে তাকে না পেয়ে স্থানীয় একটি নির্মাণাধীন ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, মাসুদ নেমে যাওয়ার পর অটোরিকশাচালক সজীব প্রায় আধঘণ্টা সেখানে অপেক্ষা করেন। এরপর টাকার ব্যাগটা নিজের কাছে নিয়ে সেখান থেকে চলে যান তিনি। ভিডিও ফুটেজ দেখার পরে বিকাশ এজেন্ট জুয়েল তার কর্মী মাসুদকে নিয়ে সদর মডেল থানায় ছুটে যান। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে। পরে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেন।

অপরদিকে অটোরিকশাচালক সজীব সেখান থেকে পুরানবাজার পুরাতন ফায়ার সার্ভিস এলাকায় তাদের গ্যারেজে যান। সেখানে যাওয়ার পর প্রথমে বিষয়টি তিনি জেলা আওয়ামী লীগের অফিস সহকারী বাদলকে জানান। বাদল টাকা পাওয়ার বিষয়টি মডেল থানা পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ গিয়ে টাকাসহ অটোচালককে থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে টাকাগুলো গুণে দেখা যায়, পুরো টাকাই ব্যাগে রয়েছে। এ ঘটনায় ওই যুবকের সততার প্রশংসা করেছেন পুলিশসহ বিভিন্নস্তরের মানুষজন। অটোচালককে তাৎক্ষণিক ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভালো কাজের জন্য শুভেচ্ছা জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।

আগের সংবাদ:
৬১ লাখ টাকার খোঁজে শ্বাসরুদ্ধকর সাত ঘণ্টা!