করোনায় আক্রান্ত সরকারি চিকিৎসক রোগী দেখেছেন বেসরকারি ক্লিনিকে!

ডা. জাহাঙ্গীর আলম

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও নিয়মিত একটি বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী দেখেছেন খানপুর ৩শ’ শয্যা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালেরই গাইনি বিভাগের প্রধান ডা.জাহাঙ্গীর আলম। গত ৬ জুন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ৮/৯দিন পর থেকেই তিনি তথ্য গোপন করে শহরের প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেছেন, এমনকি কয়েকটি অপারেশনও করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং হাসপাতালের স্টাফরা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ঐ ক্লিনিকে নতুন করে রোগী ভর্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে  প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের একাধিক নার্স ও কর্মচারী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করলেও ডা.জাহঙ্গীর আলমের রোগী দেখার বিষয়টি অস্বীকার করে বসেছেন হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা.আহমেদুল কবীর।

জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতে উপসর্গ নিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন ডা.জাহাঙ্গীর আলম। গত ৬ জুন পরীক্ষার ফলাফলে তিনি কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে গত ২৩ জুন প্রথম ফলোআপ রিপোর্টেও কোভিড-১৯ পজেটিভ আসে তার। নিয়ম অনুযায়ী বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার কথা থাকলেও চলতি সপ্তাহেই তাকে পাওয়া গেছে শহরের প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে রোগী দেখা অবস্থায়। করোনায় আক্রান্তের বিষয়টি জানার পর ঐ হাসপাতালের একটি সূত্র গণমাধ্যমকর্মীদের জানালে গত বুধবারও জাহাঙ্গীর আলমকে বেসরকারি ঐ ক্লিনিকের ২০২ নম্বর কক্ষে রোগীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে করোনায় আক্রান্ত ডা. জাহাঙ্গীরের মোবাইলে ফোন করে বিষয়টি জানতে চাইতে তিনি বলেন, গত ৬ জুন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর বাড়িতেই ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থা সুস্থ হওয়াতে হাসপাতালে এসেছিলেন। তবে রোগী দেখতে নয় তার স্ত্রীকে নিতে এসেছিলেন বলে দাবি তার। তার স্ত্রীও প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক বলে জানান তিনি। কিন্তু রিপোর্ট না পেয়ে স্ত্রীকে নিতে আসা কিংবা হাসপাতালে আসাটা সমীচিন কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।

এদিকে প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. আহসানুল কবির বলেন, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে হাসপাতালে তিনি একটি ইনজেকশন নিতে এসেছিলেন। এ সময় একজন রোগী আসলে দূর থেকেই তার কাগজপত্র দেখেছেন। গত কয়েকদিন ডা. জাহাঙ্গীর আলম এই হাসপাতালে রোগী দেখছেন এমন বিষয়টি অস্বীকার করেন হাসপাতালের এমডি।

তবে খানপুর ৩শ’শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল (করোনা হাসপাতাল) এর তত্ত্বাবধায়ক ডা.গৌতম রায় জানান, এটা একজন ডাক্তারের কাছে কখনোই কাম্য নয়। আমি বিষয়টি জানতাম না। আমি জানি তিনি বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। এ বিষয়ে তার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ জানিয়েছেন, করোনার এই মহামারিতে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে যখন সারা বিশ্বে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রশংসিত ঠিক তখন এই চিকিৎসকের এমন কর্মকাণ্ড অবশ্যই ‘গর্হিত ও দণ্ডনীয় অপরাধ’। তিনি জানান, ঘটনা জানার পরপরই আমরা উক্ত বেসরকারি হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। পাশাপাশি ডা. জাহাঙ্গীর এর মধ্যে যে যে রোগী দেখেছেন বা সংস্পর্শে এসেছেন তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।