গেট সভায় উত্তাল খুলনার শিল্পাঞ্চল, রবিবার সংবাদ সম্মেলন




পাটকলে গেটসভারাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রক্ষায় খুলনার ৯ পাটকলসহ সারাদেশের ২৬ পাটকলে একযোগে সংবাদ সম্মেলনসহ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদ নির্ধারিত এ কর্মসূচি শনিবার (২৭ জুন) স্ব স্ব মিল গেটে সভা থেকে জানানো হয়। পাটকল রক্ষায় প্রয়োজনে আত্মাহুতির মত কঠোর কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে বলেও শ্রমিক নেতারা জানান। বন্ধ না করে উন্নত প্রযুক্তির আধুনিক মেশিন সংযোজন করে পাটকল চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, সকাল ১০টায় খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলে গেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা থেকে পাটকল রক্ষায় কর্মসূচি অবহিত করা হয়েছে। রবিবার (২৮ জুন) এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

এরআগে, শুক্রবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় ইস্টার্ন জুট মিল সিবিএ কার্যালয়ে খুলনার ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের সিবিএ-ননসিবিএ এবং পাটকল শ্রমিকলীগের জরুরি বৈঠকে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

ইস্টার্ন জুটমিলের সিবিএর সভাপতি ফরাজী নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দীর্ঘ আলোচনার পর নেতৃবৃন্দ মন্ত্রণালয় ও বিজেএমসি কর্তৃক মিলের উৎপাদন বন্ধ ঠেকাতে চার দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শনিবার সকাল ১০ মিলগেটে শ্রমিক সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি অবহিতকরণ, রবিবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন রয়েছে। সোমবার (২৯ জুন) সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি রয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ জুন) বেলা ২টা থেকে মিল গেটে এবং মিলের অভ্যন্তরে শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে মিলের উৎপাদন বন্ধের পরিকল্পনা পরিবর্তন না করলে অনশনসহ আত্মাহুতি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

বিভিন্ন মিলে শনিবারের গেট সভায় বক্তব্য রাখেন পাটকল শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চুন্নু, প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএর সভাপতি শাহানা শারমিন, ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএর সভাপতি দ্বিন ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন আজাদী, স্টার জুট মিলের সিবিএর সভাপতি বিল্লাল হোসেন, খালিশপুর জুট মিলের সভাপতি আবুদাউদ দ্বিন মোহাম্মদ। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সিবিএ নেতা মুরাদ হোসেন, কওছার আলী মৃধা, খলিলুর রহমান, সোহরাব হোসেন প্রমুখ।

এদিকে মিল বন্ধের খবর শুনে শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা চরম হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। ক্রিসেন্ট জুটমিলের শ্রমিক আবুল কাশেম জানান, অমরা কাজ শিখেছি পাটকলের। আমাদের মিল বন্ধ হলে অন্য কোনও কাজ আমরা শিখি নাই। গত ২৬ বছর এ পাটকলে কাজ করে যা পেয়েছি, তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখের আহার যুগিয়েছি। তাই পাটকল বন্ধ হওয়ার খবর শুনে আমাদের চোখের ঘুম চলে গেছে।

স্টার জুট মিলের শ্রমিক মো. খায়ের জানান, পাটকল কখনও লাভজনক ছিল না। কিন্তু পাকিস্তান আমল থেকে পাটকলে ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার। তবে বর্তমান সরকার বন্ধ মিল চালু করে শ্রমিক বান্ধব সরকারের যে খেতাব পেয়েছে তা নষ্ট করতে একটি মহলের চক্রান্ত চলছে। সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মিল চালু রাখার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এসব খেটে খাওয়া সাধারণ শ্রমিকরা। তারা আরও জানান পাটকল আধুনিকায়ন করে নতুনভাবে যন্ত্রপাতি বসানোর কথা বহু আগে থেকে বলেছেন। কিন্তু সেটি না করে ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী প্রভাবিত হবেন না- এমনটাই প্রত্যাশা শ্রমিকদের।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ধ্বংসের সরকারি চক্রান্তের প্রতিবাদে এবং পাট শিল্পের আধুনিকায়নের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট, খুলনা জেলা শাখার উদ্যোগে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় মহানগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট-খুলনা জেলা শাখার উদ্যোগেও মানববন্ধন হয়। এ মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে বিজেএমসি আওতাধীন ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল, খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকদের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং কর্মহীন শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও নগদ সহায়তার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়।