করোনা আক্রান্ত নার্সদের দিয়ে চলছে রোগীদের সেবা!




চিলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সচিলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে করোনা আক্রান্ত নার্সদের দিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নমুনা নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার বিধান ও নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করে নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের ডিউটি দেওয়া হয়। পরে দুই নার্সের নমুনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ হওয়ায় হাসপাতালের স্টাফ ও রোগীদের মধ্যে ভয়ের পাশাপাশি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। করোনা আক্রান্ত নার্স, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (৩০ জুন) পাওয়া প্রতিবেদনে ওই হাসপাতালের এক সিনিয়র স্টাফ নার্সের করোনা পজিটিভ ফল আসে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৪ জুন ওই স্টাফ নার্সের নমুনা নেওয়া হলেও ১৫ জুন থেকে তাকে নিয়মিত ডিউটিতে যুক্ত করা হয়। সর্বশেষ তিনি সোমবারও (২৯ জুন) হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। মঙ্গলবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় তার নমুনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে। এরআগে, ওই হাসপাতালের আরও এক নার্সের করোনা পজিটিভ ফল আসে। নমুনা নেওয়ার পর তাকে দিয়েও একাধিক দিন হাসপাতালে ডিউটি করানোর অভিযোগ রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে করোনা আক্রান্ত ওই সিনিয়র স্টাফ নার্স জানান, নমুনা নেওয়া হলেও নার্সিং ইনচার্জ মজিবর রহমান তাকে নিয়মিত ডিউটিতে নিযুক্ত করেন। নমুনা নেওয়ার পর গত ১৫ দিনে দুই-তিন দিন বাদে তিনি প্রতিদিন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময় হাসপাতালের আউটডোরে বিভিন্ন সংখ্যায় রোগী আসার পাশাপাশি প্রতিদিন গড়ে ৫-৭ জন রোগী ইনডোরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এছাড়াও হাসপাতালের অন্যান্য স্টাফদের সংস্পর্শেও তিনি এসেছেন।

তিনি বলেন, ‘নমুনা নেওয়ার পর কোয়ারেন্টিনে থাকার নিয়ম থাকলেও আমাকেসহ নমুনা দেওয়া সব স্টাফদের দিয়ে হাসপাতালে ডিউটি করানো হয়। এতে সব স্টাফ ও রোগীদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।’

নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে অস্বাভাবিক বিলম্বে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই স্টাফ নার্স বলেন, ‘আমার কোনও উপসর্গ নেই । কিন্তু নমুনা দেওয়ার ১৫ দিন পর যদি ফলাফল পাওয়া যায়, তাহলে আমরা কীভাবে বুঝবো আমরা আক্রান্ত কিনা! অথচ আরও আগে ফলাফল পেলে এরকম পরিস্থিতি এড়ানো যেতো, অন্যরাও ঝুঁকিতে পড়তো না। এখন আমি আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত।’

তবে নার্সিং ইনচার্জ মজিবর রহমান এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘নমুনা দেওয়ার পর ওই সিনিয়র স্টাফ নার্স কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। নমুনা দেওয়ার পর ১৫ দিন পার হওয়ায় গত ২৯ জুন তিনি ডিউটি করেছেন। এর আগে তাকে ডিউটি দেওয়া হয়নি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নমুনা নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীকে ১৫ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। এ সময় তাদেরকে যেকোনও ধরনের ডিউটি থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এরপরও যদি ওই নার্সদের ডিউটি দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে এটা ভুল।’

এ বিষয়ে কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘বিষয়টি অনুসন্ধানে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো।’ পাশাপাশি হাসপাতালটি জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।