হিলি স্থলবন্দরের প্রধান সড়কের বেহাল দশা, ঘটছে দুর্ঘটনা

 হিলি স্থলবন্দরের রাস্তার কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের প্রধান সড়কটি ভাঙাচোরা হওয়ায় ছোট বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কের এসব গর্তে পানি জমে কাদা হয়ে যায়। চরম ঝুঁকি নিয়ে সড়কে আমদানি রফতানির পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্য যানবাহন চলছে। তবে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের আমদানি রফতানি কার্যক্রম, ভোগান্তির পাশাপাশি ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। বন্দর থেকে প্রতি বছর কয়েক শত কোটি টাকা রাজস্ব এলেও সড়কগুলো সংস্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমদানিকারকসহ স্থানীয়রা।

হিলি স্থলবন্দরের সামনে থেকে বন্দরের চেকপোস্ট গেট পর্যন্ত প্রধান সড়কটিতে অসংখ্য ছোট বড় গর্ত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনের জন্য হিলি-জয়পুরহাট সড়কের শান্তিমোড়, রাজধানী মোড়, হিলি দিনাজপুর সড়কের ফকিরপাড়া, হিলি ঘোড়াঘাট সড়কের ডাঙ্গাপাড়া, জালালপুরসহ অনেক স্থানে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত।

মাঝে মধ্যে সড়ক ইটসহ রাবিস দিয়ে সংস্কার করা হলেও কয়েকদিন পরেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এই বন্দর থেকে প্রতিদিন জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন রুটে পণ্য নিয়ে ট্রাক যাতায়াত করে। অপ্রশস্ত ও ধারণ ক্ষমতা কম হওয়ায় ১৫ থেকে ৪০ টন পর্যন্ত পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের কারণে সড়কগুলো বেশিদিন স্থায়ী হচ্ছে না।

রাস্তাজুড়ে শুধুই গর্ত

হিলি স্থলবন্দর থেকে পণ্য নিয়ে যাওয়া ট্রাকচালক হামিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা হিলি স্থলবন্দর থেকে পাথর নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করি। কিন্তু হিলি স্থলবন্দরের সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। যা আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। অনেক ট্রাকের এক্সেলসহ চাকা ফেটে গিয়ে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। মাঝে মধ্যে ইট দিয়ে সংস্কার করা হলেও দু’একদিন পর আবার একই অবস্থা। যাত্রীবাহী বাসগুলোকেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

দ্রুত সড়কটি যথাযথভাবে মেরামতের দাবি জানিয়েছেন সড়কে চলাচল করা অন্যান্য ট্রাক ও বাস চালকরা।

ইজিবাইক চালক মোকলেছুর রহমান ও ভ্যানচালক খালেদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, চারমাথা মোড় থেকে দক্ষিণ বাসুদেবপুর পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এই রাস্তা দিয়ে যাত্রী নিয়ে গেলে মাঝে মধ্যেই ভ্যান ও ইজিবাইককে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। যার কারণে আমরা ভয়ে হিলি বাজার হয়ে চুড়িপট্টির ছোট রাস্তা ব্যবহার করি।

সংস্কার না করায় যানবাহন গর্তে পড়ে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা

হাকিমপুর (হিলি) পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, হিলি স্থলবন্দরের প্রধান সড়কগুলো সড়ক ও জনপদ বিভাগের। সড়কগুলোর নাজুক অবস্থা তুলে ধরে বারবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। প্রতিটি জেলা মিটিংয়ে সড়কগুলো সংস্কারের দাবি জানানো হয়। মাঝে মধ্যেই সড়কে সৃষ্ট গর্তগুলোতে ইট ও রাবিশ ফেলে কিছুটা চলাচল উপযোগী করে তোলা হয়। তবে স্থায়ীভাবে মেরামতের ব্যবস্থা দরকার।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন জানান, স্থলবন্দরের প্রধান সড়কটি অপ্রশস্ত ও খানা-খন্দের সৃষ্টি হওয়ায় বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি রফতানি বিঘ্নিতসহ মানুষের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দরের চেকপোস্ট গেট থেকে জয়পুরহাট এলাকা পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হলেও করোনার কারণে কিছুদিন যাবত বন্ধ ছিল। আমি ইতোমধ্যেই ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা খুব দ্রুত এই রাস্তার নির্মাণের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।

রাস্তাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তারা বলছে রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ শেষে মেরামত কাজ শুরু হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতর দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বন্দরের ওই সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করছি আমরা। তবে বন্দরের রাস্তাটি প্রশস্তকরণ হবে, যার কারণে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, এই প্রক্রিয়া এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভুমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না করে আমরা সড়কের কাজ করতে পারছি না। মাঠ জরিপ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, হয়তোবা আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারবো। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে সড়কের কাজ শুরু করা হবে।