সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্য অপসারণ শুরু

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্য অপসারণ শুরু

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্যগুলো অপসারণ শুরু করেছে প্রশাসন। সোমবার (১৩জুলাই) সকাল ১০টা থেকে এসব বর্জ্য অপসারণ শুরু হয়। সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট থেকে শুরু করে দরিয়া নগর ও হিমছড়িসহ বিভিন্ন পয়েন্টে এসব বর্জ্য অপসারণ শুরু হয়। তবে পুরোপুরি সরিয়ে নিতে আরও দুইদিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নাজমুল হুদা।

মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা বর্জ্যগুলো সৈকত থেকে অপসারণ শুরু করেছি। সোমবার সারাদিন সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে শ্রমিকদের মাধ্যমে বর্জ্যগুলো অপসারণ করা হচ্ছে। সব সরিয়ে নিতে আরও দুইদিন লাগতে পারে।’

সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্য অপসারণ করে নিয়ে যাচ্ছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা

এদিকে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বর্জ্য ভেসে আসার কারণ জানতে রবিবার রাতেই ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

মো. কামাল হোসেন জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভেসে আসছে নানা ধরনের প্লস্টিক বর্জ্য, মাছ ধরার ছেঁড়া জাল ও রশি। এছাড়া এসব বর্জ্যের সঙ্গে ভেসে এসেছে সামুদ্রিক কাছিমসহ কিছু জলজপ্রাণিও। ধারণা করা হচ্ছে, বর্জ্যের দূষণ ও আঘাতে এসব প্রাণির মৃত্যু হয়েছে।’

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্য

তিনি জানান, শনিবার রাত থেকে এসব বর্জ্য ও মৃত প্রাণিগুলো ভেসে আসার বিষয়টি আমলে নিয়ে রবিবার বিকালে জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি দল সমুদ্র সৈকত পরিদর্শনে যান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সৈকতে বর্জ্যসহ মৃত জলজপ্রাণিগুলো ভেসের আসার কারণ জানতে তদন্তের জন্য প্রশাসন ৫ সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিটিতে জেলা প্রশাসন ছাড়াও পরিবেশ অধিদফতর ও বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে।

সাগরে ভেসে আসা বর্জ্যের কারণে সৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকা নোংরা হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত থেকে কক্সবাজার জনশূন্য সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য। রবিবার সারাদিন সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে এসব বর্জ্য ভেসে এসে কূলে ভিড়েছে। এরমধ্যে প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য ছাড়াও দেশি-বিদেশি মদের খালি বোতল, ছেঁড়া জালসহ নানা প্রকার বর্জ্য রয়েছে। সৈকতের ভ্যালি হ্যাচারি থেকে দরিয়া নগর পয়েন্ট পর্যন্ত এসব বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্যগুলো দেখে প্রশাসনের ধারণা এগুলো কোনও মাছ ধরা নৌকা থেকে ফেলা

করোনা সংকটে দীর্ঘ সাড়ে ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে কক্সবাজার সৈকতসহ এখানকার হোটেল-মোটেল ও সব পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু জনশূন্য এই সমুদ্র সৈকত সয়লাব হয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ বর্জ্যে। বিশেষ করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী, দরিয়া নগর থেকে শুরু করে হিমছড়ি সৈকত এলাকা পর্যন্ত শনিবার রাত থেকে একের পর এক বর্জ্য ভেসে আসছে। এতে আটকে সামুদ্রিক কচ্ছপসহ নানা ধরনের প্রাণী মারা পড়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা করছেন পরিবেশ সচেতনরা। স্থানীয়রে অনেকে এসব বর্জ্য স্থানীয় হোটেল মোটেলের বলে ধারণা করলেও প্রশাসনের ধারণা, সৈকতে ভেসে আসা এসব বর্জ্য কোনও হোটেল মোটেলের বর্জ্য নয়, এগুলো সাগরে ভাসমান অবস্থায় মাছধরা নৌকা, ট্রলার বা অন্য কোনও বড় জাহাজের ফেলে দেওয়া বর্জ্য হতে পারে। কারণ, ভেসে আসা বর্জ্যগুলোতে ছেঁড়া জাল, প্লাস্টিকের তেলের ড্রামসহ জেলেদের ব্যবহৃত অনেক উপকরণ রয়েছে। এমনকি জেলে জাহাজ ডুবির কারণেও সেগুলোতে থাকা বর্জ্য ভেসে সৈকতে আসতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।