মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত এসব অধিকাংশ রোহিঙ্গারা ভুলতে বসেছেন স্বদেশের ঈদ স্মৃতি। বিশেষ করে ঈদ আসলেই স্বদেশে ফেলে আসা ভিটে-বাড়ি, সহায় সম্পদ ও নানা নির্যাতনে স্মৃতির কথা মনে করে তারা চমকে উঠতো। কিন্তু, আজ অনেকটাই বদলেছে রোহিঙ্গাদের মানসিকতা। কোনও ধরনের মানসিক চাপ ছাড়াই বাংলাদেশের মাটিতে এবারের ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন তারা। এমনকি করোনার এই দুঃসময়েও রোহিঙ্গাদের মধ্যে কোনও ধরনের পরিবর্তন হয়নি।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আয়ুব আলী মাঝি জানান, ‘ঈদুল আজহার নামাজ ক্যাম্পে সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ শেষে এনজিওদের দেওয়া কোরবানির পশু জবাইয়ের পর আমার আওতাধীন সব রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে তা বণ্টন করেছি। আল্লাহর রহমতে আজ খুব খুশি।’
একই ক্যাম্পের আরেক রোহিঙ্গা মাঝি মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আমাদের দেশ মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশে আমরা ভালো আছি। মিয়ানমারের আমরা ভালোভাবে নামাজ পড়তে পারিনি, কোরবানি করতে পারিনি। আজ আমরা বাংলাদেশে এসে সব কিছু করতে পারছি। এতে আমরা খুশি।’
এদিকে কোরবানি হলেও ক্যাম্পের অনেকে গোশত পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবক আবু তাহের বলেন, ‘কোরবানির ঈদে আমরা খাওয়ার জন্য কিছু গোশত পেলেও, ক্যাম্প-১ এর সি-ব্লকের রোহিঙ্গারা কোনও গোশত পাননি। কোন এনজিও এবং সংস্থা সেখানে গরুর গোশত বিতরণ করেনি।’
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান জানান, ‘কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক হাজার ২০টি মসজিদ ও ৫৪০টি নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও টেকনাফের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫টি, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৪৫টি ও ২০টি নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব মসজিদ ও নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঈদের জামাত আদায় করেছেন মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এতে কোনও অসুবিধা হয়নি।’
গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ নানা নির্যাতন থেকে বাঁচতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৯ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা। এর আগে ২০১৬ সালে ৭৫ হাজারসহ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা সদস্য। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি ক্যাম্পে আছে। সে থেকে এখনও আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনী।