ভুতুড়ে আগুনে দিশেহারা গ্রামবাসী

117338388_325651025291647_3925769376253313573_n (1)

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শালমারা গ্রামের ১০টি পরিবারের অর্ধশত মানুষ আগুনের আতঙ্কে দিন-রাত পার করছেন। অজ্ঞাত উৎসের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে বসতঘর, বাড়ির আঙ্গিনা, খড়ের পালা, কাপড় ও বিছানাপত্রে। বুধবার (১২ আগস্ট) সকালে উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডেও শালমারা গ্রামের কানু দে, চণ্ডী চরণ দে, রূপক দে, বাবুল দে ও রানু দের ঘরসহ ১০টি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়- অজ্ঞাত উৎসের আগুনে পুড়ে যাওয়ায় পরিধেয় বস্ত্রসহ অন্যান্য সামগ্রী বাড়ির আঙ্গিনায় স্তুপ করে রেখেছেন তারা। বেশ কিছুদিন থেকে এভাবে কোনস্থানে হুট করে আগুন লাগছে বলে অভিযোগ তাদের।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক কানু দে জানান, ২৪ জুলাই সকালে তিনি বসত বাড়ির আঙ্গিনায় বসে ছিলেন। এমন সময় খড়ের ঘর থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে তিনি এগিয়ে যান। পূবালী বাতাসে খড়ের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। পরে চিৎকার দিলে পাড়া প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজন এসে আগুন নেভায়।

চণ্ডী চরণ দে বলেন, 'স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি বসতঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। রোদে শুকাতে দেওয়া কাপড়গুলো অনেক সময় আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এক জায়গার আগুন নেভাতে না নেভাতেই অন্য জায়গায় আগুন লেগে যায়।'

গৌড়চাঁদ দে জানান, আগুন লাগার এমন ঘটনা তিনি আর কখনোই দেখেননি। কীভাবে কোন জায়গায় আগুন লাগে তা বাড়ির কেউ জানতে পারে না।

117286512_4309099652497811_8556682403984014690_n

শিক্ষার্থী কৃষ্ণা দে বলেন, 'আগুনে পুড়ে যাওয়ার ভয়ে এসব বাড়ির কেউ ঘরের আলনায় কাপড় রাখছেন না। বেশ কয়েক বারের আগুনে তার পরিবারের অনেকের শাড়ি, লুঙ্গি, জামা, তোষক পুড়ে গেছে।' তাই এখন নিরূপায় হয়ে অন্যের বাড়িতে প্রতিদিনের পরিধেয় কাপড় রেখে এসেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

গৃহবধু গীতা রানী দে বলেন, 'অনেক বছর হলো এ বাড়িতে আমার বিয়ে হয়েছে। জীবনেও এমন আগুন লাগার ঘটনা দেখিনি। দিনে কিংবা রাতে তিনি ঘরে অবস্থান করলেও শরীর জ্বালাপোড়া শুরু করে।'

নন্দিতা রানী দে বলেন, 'বাড়ির নারী পুরুষ সবাই গত তিন সপ্তাহ ধরে আগুন লাগার আতঙ্কে ঘুমাতে পারেন না। দিনে-রাতে বাড়ির সবাই আগুনের ধোঁয়া খুঁজে বেড়ান।'

লক্ষ্মীরানী দে জানান, তাদের বাড়িতে কচুখালী গ্রামের পারুল রানী দে বেড়াতে এসেছিলেন। তিনি বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় শাড়ির আঁচলে আগুন লেগে যায়।

ইউপি সদস্য বিজয় কর বলেন, 'জুলাই মাস থেকে এভাবে আগুন লাগার ঘটনা চলে আসছে। প্রথমে কেউ গুরুত্ব না দিলেও বিশ্বম্ভরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা আস্বাভাবিক আগুন লাগার কারণ উদঘাটন করতে শালমারা গ্রামে এসে ছিলেন। তারা ওই বাড়িগুলোতে এক রাত অবস্থান করেন। তারা থাকার সময়েও বাড়িগুলোতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। কোথা থেকে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত তা স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন নির্ণয় করতে পারেনি।

117321973_341422933548501_5069994593698995549_n

বলাই দাস বলেন, 'আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সদস্যরা চিৎকার শুরু করলে গ্রামবাসী এসে আগুন নেভানোর কাজ করেন। এভাবেই চলছে এখন দিনরাত।'

বীরেন্দ্র দে জানান, তার ঘরে দুবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বাইরে রাখা দুটি খড়ের পালায়ও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আগুন লাগার ঘটনা ঘটে বেশি।

আতঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা জানান, আগুন লাগার শুরুতে ধোঁয়া ওঠে। পরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে। কখন কোন দিকে আগুন লাগবে, তা কেউ জানে না। সেজন্য বালতি ড্রাম ভর্তি করে আগুন নেভানোর জন্য পানি রেডি রাখা হয়।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন ইনচার্জ হিমাংশু রঞ্জন সিংহ বলেন, 'এভাবে আগুন লাগলে আতঙ্কিত না হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয় এ বিষয়ে তাদের কোনও ধারনা নেই। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের আগুন নেভানোর কলাকৌশল বলে দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ওই বাড়িগুলোতে অবস্থানকালেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কোনও ধরনের নিস্ক্রিয় গ্যাসের কারণে এরকম হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসনকে এবিষয়ে একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস পরিবারগুলোকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, 'এভাবে আগুন লাগার বিষয়টি বাপেক্স ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন।' বেশি অসুবিধা হলে তিনি এসব পরিবারকে অন্যত্র কিছু দিন বসবাস করার পরামর্শ দিয়েছেন।