করোনার সুযোগে জীবনের মোড় ঘোরালেন কোহিনুর

117305176_840877452983421_5258200309007510450_n

করোনার অভিশাপ কারও কারও জীবনে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনই একজন ব্যক্তি হলেন মাগুরার কোহিনুর। আজীবন নিজেকে কোনও পেশায় যুক্ত করার স্বপ্ন দেখলেও তা কখনও আলোর মুখ দেখবে ভাবেননি। কিন্তু করোনার মধ্যে অনলাইন ফুড সেন্টার রাইসা’স কিচেন ঘুরিয়ে দিলো তার জীবনের মোড়।

কোহিনুর ও পরিবার সূত্রে জানা যায়,মাত্র ১৭ বছর বয়সে মাগুরা পৌরসভার পারনান্দুয়ালীতে একটি শিক্ষিত পরিবারে বিয়ে হয় কোহিনুর আলমের। শ্বশুর, ননদ, দেবর সবাই শিক্ষিত এবং কর্মজীবী। শ্বশুর তাকে আগ্রহভরে ভর্তি করিয়েছিলেন সেলাই শিক্ষায়। নানা সমস্যায় বেশি দূর যাওয়া হয়নি। ব্যবসায়ী স্বামী আর দুই কন্যাকে নিয়ে সাংসারিক কাজে কেটে যাচ্ছিলো সময়। হঠাৎ করোনার আবির্ভাবে স্বামীর ব্যবসায় যেন একটু খারাপ সময় আসতে লাগলো। কোহিনুর ভাবলেন এখন সময় এসেছে স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর। ননদ ইস্মত আরা ব্যাংকক থেকে পরামর্শ দিলো ফেসবুক গ্রুপ উই-তে (উমেন অ্যান্ড ইকমার্স ফোরাম) যুক্ত হতে। মূলত উই থেকে আইডিয়া নিয়ে শুরু করেন অনলাইন ফুড সেন্টার রাইসা’স কিচেন। মেয়ের নামে রাখা এই প্রতিষ্ঠানটি এখন আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে মাগুরাবাসীর কাছে। তবে শুধু মাগুরাতেই নয়, ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জেলায়ও খাবার ডেলিভারি দিয়েছেন তিনি।

117444954_1404032876654368_8646711514336238686_n

মাগুরা শহরের কলেজ পাড়ার অধিবাসী সোহেলী শাহনাজ স্বপ্না বলেন, 'একজন নারীর এমন উদ্যোগ খুব ভালো লেগেছে। আমি বেশ কয়েকবার রাইসা’স কিচেন থেকে বিভিন্ন খাবার নিয়েছি। খাবারের মানও খুব ভালো।'

সদর উপজেলার হাজিপুরের বাসিন্দা রোজালিন ফারজানা শুক্লা বলেন, 'সবসময় সব খাবার বাড়িতে তৈরি করা সম্ভব হয় না। আমি বেশ কয়েকবার রাইসা’স কিচেন থেকে নাড়ু, পিঠা, কাবাব অর্ডার দিয়েছি। ওদের সার্ভিস খুব ভালো। মাগুরায় এমন একটা উদ্যোগে আমরা খুব খুশি।'

৩৮ বছর বয়সী কোহিনুর আলম বলেন, 'স্বপ্ন ছিল অনেকদিনের যে কিছু একটা করবো। করোনা সংকটে ননদ এবং দেবরের উৎসাহে শুরু করে দিলাম রাইসা’স কিচেন। পুঁজি বলতে শুধু আমার শ্বাশুড়ির কাছে শেখা নান পদের রান্না। জুন মাসের ৭ তারিখে শুরু করে প্রথম মাসেই অর্ডার পেলাম দশ হাজার টাকার। এরপর অর্ডার বাড়তেই থাকে। বর্তমানে আমি ডেলিভারি ও অন্যান্য কাজের জন্য বেতন দিয়ে লোকও রেখেছি। প্রতিদিনই অর্ডার বাড়ছে। মূলত নাড়ু, পাটিসাপটা, চটপটি, ফুচকা, ছোলাভাজার অর্ডার বেশি আসছে। এছাড়াও পোলাও, বিরিয়ানি, মাংসের আইটেমসহ চাইনিজ খাবারেরও অর্ডার পাচ্ছি। আমি অর্ডার অনুযায়ী খাবার তৈরি করি এবং তা পৌঁছে দিই। কোনও খাবার তৈরি করে রাখি না। এজন্যই হয়তো আমার ওপর আস্থা রাখছে মানুষ।