৩০ হাজার টাকার ফ্রিজ চালাতে দেড় লাখের সোলার!

117736818_3407718132617964_7176909797606296592_n

খাগড়াছড়ির দুর্গম যোগ্যাছোলা বাজারে একটি কুলিং কর্নারের মালিক আবদুর রহমান আরিফ। চলমান গরমের সময়ে স্থানীয়দের ঠান্ডা পানীয়ের চাহিদা মেটাতে তিনি নিজ দোকানে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ফ্রিজ কিনেছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় এই ফ্রিজ চালাতে দেড় লাখ টাকা দিয়ে একটি সোলার বসাতে হয়েছে তাকে। শুধু আরিফ নয়, তার মতো যোগ্যাছোলা বাজারের আরও পনেরো জন ব্যবসায়ীসহ পুরো ইউনিয়নের প্রায় ২০০ ব্যক্তি ২৫-৩০ হাজার টাকার ফ্রিজ চালাতে এক থেকে দেড় লাখ টাকার সোলার ব্যবহার করে আসছেন।

সম্প্রতি এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ৪৯ বছর পেরোলেও বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যাছোলা ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। যোগ্যাছোলা ইউনিয়নে দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮টি দাখিল ও এবতেদায়ী মাদ্রাসা, ২৬টি মসজিদ, ১৬টি বৌদ্ধ বিহার, তিনটি গির্জা ও ১০টি মন্দির রয়েছে। এই ইউনিয়নেই রয়েছে অত্যাধুনিক সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্র, যেখান থেকে প্রতি মাসে হাজার হাজার ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়।

117647511_2085018938296664_8575618030087746825_n

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বিভিন্ন সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিদ্যুতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশ স্বাধীনের পরে ৪৯ বছর পার হচ্ছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি আর আলোর মুখ দেখছে না। বাংলাদেশে সম্ভবত একমাত্র এই ইউনিয়নের আমরাই হতভাগ্য বাসিন্দা, যারা এখনো বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হতে পারিনি। আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়াসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন বঞ্চিত, তেমনি কৃষকেরা সেঁচ সুবিধা বঞ্চিত, ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত।'

যোগ্যছোলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সুজাত আলী বলেন, ' যখন টেলিভিশনে দেখি ও পত্রিকায় পড়ি- বিদ্যুত উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে পুরো দেশে। কিন্তু যোগ্যাছোলা ইউনিয়নে যোগ্যছোলা বাজারসহ প্রায় ৫৫ গ্রামের প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত। এই ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার একর জমি শুষ্ক মৌসুমে অনাবাদি থাকে। জমিগুলো চাষের আওতায় আনলে খাদ্য উৎপাদন বাড়তো।'

সাবেক মেম্বার প্রিয় লাল চাকমা বলেন, ''সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও যোগ্যাছোলা ইউনিয়ন বিদ্যুৎবিহীন থাকায় আধুনিকতার উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি। সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ‘গ্রাম হবে শহর’ প্রক্রিয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যুৎ এই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি।''

খাগড়াছড়ি নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার ও মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন জানান, মানিকছড়ি উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামেই বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হবে। যোগ্যাছোলা ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামে বিদ্যুত সংযোগ দেওয়ার জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলোর কাজ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে শুরু হবে।