১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ট্রেনযোগে উত্তরবঙ্গে নির্বাচনি প্রচারের প্রাক্কালে তিনি হিলি রেলস্টেশনে এক সভায় এসব কথা বলেছিলেন। তবে সেই দিনের নির্ধারিত দিন তারিখ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং এলাকার প্রবীণ ব্যক্তির াসঠিকভাবে বলতে পারেননি।
তৎকালীন ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট কবীর উদ্দিন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম, যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই রেলপথ দিয়ে নির্বাচনি প্রচারণার কাজে যাবেন। তার আসার খবরে আমরা হিলিবাসী উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছিলাম। সত্যি সত্যিই সেই দিন ঘনিয়ে আসলো, আমরা জানতে পারলাম যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুলনা থেকে ট্রেনযোগে আমাদের এই পথে আসছেন। বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী সেই ট্রেনটি যখন জয়পুরহাটে এসে পৌঁছায়, তখন আমরা হিলি রেলস্টেশন মাস্টারের মাধ্যমে জানতে পারি। সেই খবরে হিলির আপামর জনসাধারণ স্টেশনে ভিড় জমায়। স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও দলীয় নেতাকর্মীরাসহ আমরা ছাত্র ইউনিয়নের পুরো টিম সেখানে উপস্থিত ছিলাম। এর পর ধীরে ধীরে সেই ট্রেনটি হিলি রেলস্টেশনে এসে থামলো, তাকে দেখার জন্য সবাই ট্রেনের কাছে যেতে লাগলো। এসময় তিনি সবার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন।
তারা আরও বলেন, তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। অনেকেই তার সঙ্গে হাত মেলান, সেই সুযোগে আমরাও হাত মেলালাম। এদিকে তার আসার খবরে তাকে এক নজর দেখার জন্য ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষ সীমান্তে ভিড় জমিয়েছিলেন। এসময় তিনি তাদের আসতে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। পরে তারাও এসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনেন।
এসময় স্থানীয় নেতারা হিলি রেলস্টেশনে মেইল ট্রেন দাঁড়ানো, স্টেশনের উন্নয়নসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু সেসব দাবি পূরণের আশ্বাস দেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, 'হিলি তো আর দেশের বাইরে নয়, আমাদের দেশের ভেতরেই। কাজেই দেশের ভেতরেই যদি হয়, দেশের সব মানুষ যে সুযোগ সুবিধা ভোগ করে, হিলির মানুষও সেই সুযোগ-সুবিধা পাবে।'
তার যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী সেই খুলনা মেইল ট্রেনটি হিলি রেলস্টেশনে আপ ডাউনে দু'পর্যায়ে স্টপেজ দেওয়া শুরু করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুলনা থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত ট্রেনযোর্গে মার্চ করেছিলেন। এসময় তিনি প্রতিটি স্টেশনে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য তিনি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন। এরই অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বহনকারী ট্রেনটি হিলি রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে দিনাজপুর যাওয়ার পথে ডাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশনে দাঁড়ায়। তাকে দেখার জন্য আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ প্লাটফর্মসহ আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আমিও সেসময় স্টেশনের পাশেই দাঁড়িয়েছিলাম। এসময় ট্রেন থেকেই বঙ্গবন্ধু উপস্থিত জনসাধারণের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে ট্রেনটি ধীরে ধীরে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে ডাঙ্গাপাড়া স্টেশন ছেড়ে যায়।