ধুলার শহর হিলি!

হিলি১ধুলার শহরে পরিণত হয়েছে দিনাজপুরের হিলি। বন্দর এলাকার বিভিন্ন সড়কগুলোর বেহাল দশা ও পণ্যবাহী ট্রাক, বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত বাতাসের সঙ্গে এখানে উড়ে বেড়ায় ধুলা-বালি। এ কারণে সড়ক দিয়ে চলাচলরত সাধারণ মানুষ পড়ছেন বেকায়দায়। সড়কের পাশের বাসা-বাড়ি ও দোকানপাট ধুলায় থাকে ধূসরিত। ধুলার কারণে অনেক মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থলবন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ পণ্যবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করে। এসব পণ্য নেওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বন্দরে প্রায় পাঁচ শতাধিক ট্রাক প্রবেশ করে। অন্যদিকে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করেন। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নৈশকোচসহ বেশকিছু আন্তঃজেলা বাসও চলাচল করে।

হিলি৩তবে হিলি স্থলবন্দরের চেকপোস্ট সড়ক থেকে শুরু করে বন্দরের গেট, চারমাথা থেকে শুরু করে রাজধানী মোড়, বন্দরের গেট থেকে জালালপুর পর্যন্ত সড়কে ও সিপি থেকে শুরু করে বাজার হয়ে রাজধানী মোড় পর্যন্ত সড়কের অনেক স্থানে ভাঙাচোরা থাকায় সড়কে ধুলার স্তর জমে রয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে যখন যানবাহন চলাচল করে তখন ধুলা-বালিতে সব একাকার হয়ে যায়।

একইভাবে বন্দরের ভেতরেও পাথর লোড-আনলোডের সময় ব্যাপক ধুলা বাতাসে মিশে যায়। সড়কের পাশে থাকা গাছগুলোতে পড়েছে ধুলার স্তর। ধুলা থেকে স্থানীয়দের রেহাই দিতে পৌরসভার পক্ষ থেকে সকাল ও বিকাল পানি ছেটানো হলেও তা অপ্রতুল। পানি ছেটানোর কিছুক্ষণ পরেই সড়ক শুকিয়ে গিয়ে আবারও ধুলা উড়তে থাকে।

হিলি২হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড়ের ব্যবসায়ী মুন্না মিয়া ও শাহ আলম প্রধান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হিলি একটি সুপরিচিত শহর। স্থলবন্দর হওয়ার কারণে হিলিকে সবাই চেনে। কিন্তু হিলি এখন ধুলার শহর হয়ে উঠেছে। স্থলবন্দরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটগুলো ভাঙাচোরা হওয়ার কারণে প্রচণ্ড ধুলায় টেকা দায়। সড়কের পাশে আমাদের দোকান, কিন্তু ধুলার কারণে দোকানে বসে থাকা দায়। একইসঙ্গে দোকানের মালপত্র ধুলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধু ধুলার কারণে আমাদের জনজীবন অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ কারণে দোকান-পাট খুলে রেখে চলাচল করতে পারছি না। মাস্ক দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে পৌর মেয়র সড়কে পানি ছিটিয়ে কিছুটা সমস্যা নিরসনের করার চেষ্টা করছে। তবে তাতেও সমস্যা কাটছে না।

আমদানিকারক মাহফুজার রহমান বাবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ধুলার কারণে হিলি শহরে বসবাস ও চলাচল বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। ধুলায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সকাল থেকে শুরু করে রাত দশটা পর্যন্ত যতক্ষণ গাড়ি চলে, ধুলায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চারপাশ। অফিসগুলোতে ধুলার একটা স্তর জমে থাকে, পাশাপাশি অনেক মানুষের শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।

হিলি৪স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আকতার ও কলেজছাত্র পারভেজ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আমরা যখন সড়ক দিয়ে স্কুল-কলেজে যাই, তখন সড়কে প্রচণ্ড ধুলা উড়ে, প্রতিনিয়ত ধুলার মাঝে যাতায়াত করার কারণে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। অনেকের শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসজনিত নানা রোগ হচ্ছে, অনেকের পোশাক নষ্ট হচ্ছে। আমরা এই ধুলাবালি থেকে মুক্তি চাই।

হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ধুলার কারণে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে যাদের অ্যাজমা, সিওপিডি, নিউমোনিয়াসহ রোগ রয়েছে তাদের সমস্যা বাড়তে পারে। অথবা পরবর্তীতে যাদের অ্যাজমা নেই তাদেরও এ সমস্যা হতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে লাংসের বিভিন্ন সমস্যা। এক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ হচ্ছে, ধুলা-বালির এলাকায় মাস্ক পরতে হবে। বাসায় আসার পর মুখ-হাত ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

হিলি৬হাকিমপুর (হিলি) পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হিলি একটি স্থলবন্দর এলাকা, এ কারণে এখানে অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করে। এতে করে সড়কগুলোতে ধুলাও অনেক বেশি। আর এসব ধুলার কারণে মানুষ অনেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ধুলা যাতে পৌরসভাধীন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেজন্য পৌরপরিষদ সিন্ধান্ত নিয়ে সাধারণভাবে পানি ছেটানোর কাজ করছে। রাস্তায় পানি ছেটানোর সেই কাজ চলমান রয়েছে। তবে এ চেষ্টা অপ্রতুল। তাই অবস্থার উন্নতির জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ও আমাদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করেছি। আমরা আশাবাদী সিটি করপোরেশনের মতো পৌরসভাতেও ধুলা নিয়ন্ত্রণে পানি দেওয়ার জন্য গাড়ি সরবরাহ করা হবে।