দীর্ঘদিনেও অগ্রগতি নেই জয়পুরহাটের চাঞ্চল্যকর দুটি মামলার

মাড়োয়ারি দম্পতি কৃষণ লাল রুংটা ও দেবী রুংটাদীর্ঘ সময়েও জয়পুরহাট শহরের জনতা ব্যাংক থেকে ৪৫ লাখ টাকা চুরি এবং চাঞ্চল্যকর মাড়োয়ারি দম্পতি হত্যা মামলায় জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি ব্যাংকের চুরি যাওয়া টাকা এবং নিহত দম্পতির টাকা ও স্বর্ণালংকার। দীর্ঘ সময়েও অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এসব মামলার বাদী ও সংশ্লিষ্টরা।  

২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর সকাল পৌনে ১১টার দিকে জয়পুরহাট শহরের বাটার মোড় এলাকার জনতা ব্যাংক থেকে ৪৫ লাখ টাকা চুরি হয়। চোররা ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে ক্যাশিয়ারের পায়ের কাছে কালো ব্যাগে রাখা ৪৫ লাখ টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়। চুরির দশ মিনিট পরে ক্যাশিয়ার টাকার ব্যাগ খুঁজে না পাওয়ায় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। পরে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজে দেখা যায় ওইদিন সকাল ১০টা ৪৫ থেকে ১০টা ৫৫ মিনিটে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ব্যাগটি নিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি ব্যাংকের দক্ষিণ দিকে হেঁটে গিয়ে অন্য এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়। ওই ব্যক্তি দ্রুত ব্যাগটি নিয়ে সটকে পড়ে। সিসিটিভির ফুটেজে এমন দৃশ্য ধরা পড়লেও গত পৌনে তিন বছরেও পুলিশ জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেননি।

এ ঘটনায় ওইদিন ব্যাংকের তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক শাহ আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে জয়পুরহাট সদর থানায় মামলা করলে পুলিশ ব্যাংকের ক্যাশিয়ার রায়হান আলী, সাইফুল ইসলাম এবং ব্যাংকের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আমানত হোসেনকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোনও ক্লু পাওয়া যায়নি। দিনে দুপুরে ব্যাংক থেকে টাকা চুরি যাওয়ার ওই ঘটনার পর থেকে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক শাহ আলম, ক্যাশিয়ার রায়হান আলী ও সাইফুল ইসলাম সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

ঘটনার ৬ মাস পর ২০১৮ সালের ৪ জুন মামলাটি জেলা অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) ন্যস্ত হয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন আরও দুজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তারা হলেন– দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার তোফাজ্জল হোসেন এবং বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ থানার আমতলী গ্রামের ইদ্রিস সিকদার। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে চুরি যাওয়া টাকা সম্পর্কে কোনও তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি সিআইডি। এ অবস্থায় টাকা চুরির এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া পাঁচ আসামিই আদালত থেকে জামিন নেয়। 

টাকা চুরি মামলার বাদী ও ব্যাংকের বরখাস্ত হওয়া শাখা ব্যবস্থাপক শাহ আলম বলেন, ‘দিনের বেলায় ব্যাংক থেকে ৪৫ লাখ টাকা চুরি যাওয়ার ঘটনাটি ব্যাংকের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তারপরও পুলিশ চুরির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত অথবা টাকা উদ্ধার করতে পারেনি।’ মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় চাকরি হারিয়ে তারা খুবই কষ্টে আছেন জানান তিনি।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাতে শহরের পূর্ববাজার কাপড় পট্টি এলাকায় নিজ বাড়ির কক্ষে খুন হন মাড়োয়ারি দম্পতি কৃষণ লাল রুংটা ও দেবী রুংটা। তাদের খুন করে নগদ টাকাসহ ৮ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার লুট করার অভিযোগে ২২ ডিসেম্বর অজ্ঞাত আসামি করে জয়পুরহাট সদর থানায় মামলা করেন নিহতদের ছেলে বিক্কি কুমার রুংটা। কিন্তু পুলিশ মামলাটির কোনও কূল-কিনারা করতে না পারায় ওই বছরের মে মাসের ১১ তারিখে বাদী বিক্কি কুমার রুংটা সিআইডির কাছে মামলাটি হস্তান্তর করার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেন। এরপর মামলাটি সিআইডি তদন্ত শুরু করলেও দীর্ঘ সময়েও সুরাহা করতে পারেনি।

নিহতদের ছেলে বিক্কি কুমার রুংটা বলেন, ‘ঘটনার ২০ মাস অতিবাহিত হলেও বাবা-মার খুনিদের পুলিশ শনাক্ত অথবা লুট হওয়া টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করতে পারেনি। এভাবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হয়তো সবকিছু চাপা পড়ে যাবে। হয়তো বাবা-মা হত্যার বিচার আমরা কোনোদিন পাব না।’

জেলায় সদ্য যোগদান করা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, ‘করোনার কারণে তদন্ত কাজে কিছুটা বিলম্ব ঘটছে। এরই মধ্যে তদন্তকারী একজন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্তও হয়েছেন। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি চাঞ্চল্যকর দুটি মামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার।’