ইউএনও’র ওপর হামলাকারী ছিল পিপিই পরা

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবন
ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের (৭০) ওপর হামলায় দুই ব্যক্তি অংশ নেয়। পিপিই পরে ওই দুই দুর্বৃত্ত বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত ২টার দিকে বাসভবনে প্রবেশ করে। তারা নৈশপ্রহরী আব্দুর রাজ্জাককে বেঁধে ফেলে। পরে একজন হাতুড়ি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ভেনটিলেটর ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। সেখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর হামলাকারীরা বেরিয়ে আসে। ইউএনও’র বাসার সিসিটিভি ফুটেজে এমনটাই দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, বিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মিথুন সরকার, হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুর রাফিউল আলম ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহারসহ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং সিআইডি ও ডিবির পৃথক দল সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করেন। পরে এ নিয়ে তারা বৈঠক করেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বৈঠক শেষে দলটি আবারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

এছাড়া দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিকও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সূত্র জানায়, সিসিটিভির ফুটেজে হামলার সঙ্গে দু’জনকে জড়িত থাকতে দেখা গেছে। তারা দু’জনেই পিপিই পরেছিল। তবে মই বেয়ে ভেনটিলেটর দিয়ে একজন প্রবেশ করে। সে একঘণ্টার মতো সেই রুমে অবস্থান করেছিল বলেও ফুটেজে দেখা গেছে।

তবে পুলিশের রংপুর বিভাগের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, বাসায় দু’জন প্রবেশ করেছিল। একজন ছিল পিপিই পরা। তবে সংখ্যাটা দু’জন নাকি আরও বেশি তা যাচাই করা হচ্ছে। ওই বাসার সব সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হচ্ছে। 

অবশ্য হামলাকারী ইউএনও’র শিশু সন্তান আদিয়ার (৩) ওপর কোনও আঘাত করেনি বলে সূত্র জানায়।

গুরুতর আহতাবস্থায় ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় পাঠানো হয়এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এমপি শিবলী সাদিক বলেন, ঘটনাদৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে এটি ডাকাতির উদ্দেশ্যে নয়, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা চালানো হয়েছে। এখানে র‌্যাব, পুলিশ, সিআইডি, ডিবির দল তদন্ত করছে। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার রয়েছেন, তারাও বিষয়টি দেখছেন।

জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, আপনাদের বলার মতো এখনও এমন কিছু পাওয়া যায়নি। কিছু পেলে অবশ্যই আপনাদের ডেকে জানানো হবে। তবে এতটুকু বলতে পারি, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা চালানো হয়েছে। একজন ইউএনও’র ওপর এমন হামলা হেলাফেলার বিষয় নয়, গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

এদিকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রংপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার মাথার হাড় দেবে গেছে এবং শরীরের একপাশ অবশ হয়ে গেছে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজকুমারসহ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইউএনওকে পরীক্ষা করে সাংবাদিকদের জানান, তার মাথার আঘাত গুরুতর। হাড় দেবে গেছে। শরীরের এক পাশ প্যারালাইজড। ডা. রাজকুমার বলেন, ‘দ্রুত তার অপারেশন করা দরকার। এজন্যই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

ওয়াহিদা খানমের নওগাঁর মহাদেবপুরে বাবার বাড়ি। তার স্বামী মেজবাউল হাসান পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায়।

প্রসঙ্গত, বুধবার রাত দুইটার দিকে সরকারি বাসভবনের ভেনটিলেটর ভেঙে প্রবেশ করে ইউএনও ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তাদের উভয়ের শরীর ও মাথায় আঘাত রয়েছে। ইউএনওর বাবা ওমর আলী শেখ প্রতিদিন সকালে হাঁটাহাঁটি করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বাড়ি থেকে হাঁটার জন্য বের না হওয়ায় তার সঙ্গীরা খোঁজ নিতে আসেন। বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করে কোনও সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন তারা। পরে পুলিশ এসে ইউএনও ও তার বাবাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় প্রহরীকে একটি ঘরে বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে জানা গেছে। বর্তমানে ইউএনওর বাবা ও বাসার প্রহরী রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

আরও পড়ুন:

ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের সব তদন্ত ইউনিট মাঠে: ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য

ইউএনও ওয়াহিদার অবস্থা সংকটাপন্ন, বিদেশে নেওয়ার পরিস্থিতিও নেই

ইউএনও ও তার বাবাকে কুপিয়ে ‘মৃত ভেবে’ ফেলে রেখে যায় হামলাকারীরা

অবস্থা গুরুতর, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ইউএনও ওয়াহিদাকে

দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ইউএনও’র ওপর হামলা