অনুমতি না মেলায় আসেনি পেঁয়াজ, কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা

পেঁয়াজ (ফাইল ছবি)আগের এলসির বিপরীতে গত রবিবার টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজ রফতানির কথা থাকলেও অনুমতি না মেলায় বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসেনি। তবে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) অনুমতি মিললে ভারত পেঁয়াজ রফতানি করতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। এদিকে আমদানি হওয়ার কথায় দাম কমলেও পেঁয়াজ না আসায় আবার বেড়েছে দাম। মাত্র একদিনের ব্যবধানে হিলিতে আবারও কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অনুমতি না মেলায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কোনও পেঁয়াজ প্রবেশ করেনি। এর আগে, অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে গত সোমবার থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। ওই দিন থেকেই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।

হিলির আড়তগুলো ও বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা রবিউল ইসলাম ও সাজ্জাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রবিবার হিলি স্থলবন্দরের আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে গেলাম ৩৫ টাকা কেজি দরে, সোমবার বিকাল পর্যন্ত একই দাম ছিল। যেই বিকাল থেকে শোনা গেল পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ, তখন থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এর মধ্যেই অনেকে গুদাম বন্ধ রেখে পেঁয়াজ থাকার পরেও বিক্রি বন্ধ করে দেয়। এ কারণে মঙ্গলবারে পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। আবারও যেই বুধবার পেঁয়াজ ঢুকবে এমন কথা শোনা গিয়েছিল, তখন ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম কমিয়ে বিক্রি শুরু করে। তখন ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় দাম নেমে আসে। কিন্তু যেই আবার বুধবার পেঁয়াজ ঢুকলো না তখন ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেয়। এ কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৭০ টাকা হয়ে যায়। সব গুদামেই পেঁয়াজ আছে, কিন্তু তারা কেউ কম দামে পেঁয়াজ ছাড়ছে না।

হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা এরশাদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বুধবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে আমদানিকারকরা পেঁয়াজের দাম কমিয়ে বিক্রি করেছিল। আমরাও কম দামে কিনে কম দামে বিক্রি করেছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজ না ঢোকায় দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। মূলত আমদানিকারকদের জন্যই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে, তাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পেঁয়াজ আছে। কিন্তু তারা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না। এ কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে গত সোমবার ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এতে আমাদের পেঁয়াজবোঝাই ২৫০টি ট্রাক ভারতের অভ্যন্তরে আটকা পড়ে রয়েছে। একইসঙ্গে আমরা যে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি দিয়েছিলাম, সে প্রক্রিয়াও বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন, গত রবিবারে টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজগুলোর রফতানির অনুমতি মিলতে পারে। তবে বুধবার পেঁয়াজ আসেনি। তবে বৃহস্পতিবার সেই অনুমতিপত্র বা নোটিফিকেশন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জানান তারা। এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা অনুমতি পায়নি। এ কারণে আজ এখন পর্যন্ত কোনও পেঁয়াজ রফতানি হয়নি।

আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্চ মাসে বন্দর দিয়ে ১২৯টি ট্রাকে দুই হাজার ৩০৮ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। করোনার কারণে বন্ধ থাকায় এপ্রিল, মে মাসে বন্দর দিয়ে কোনও পেঁয়াজ আসেনি। জুন মাসে ৬৩৭টি ট্রাকে ১৪ হাজার ৮৬৪ টন, জুলাইয়ে ৮৫৪টি ট্রাকে ২৩ হাজার ৩৪৬ টন, আগস্ট মাসে ৫৬২টি ট্রাকে ১৫ হাজার ৮১২ টন, সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ২৯২টি ট্রাকে ৮ হাজার ১৫০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এদিকে রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে ৬টি ওয়াগন বা রেকের মধ্য দিয়ে ১৪ হাজার ৯৭২ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।