সোলার প্রকল্পের ৮৪ লাখ টাকা তছরুপের সত্যতা পেয়েছে কমিটি




অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুকুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি সোলার সিস্টেমের (সৌরবিদ্যুৎ) প্রায় ৮৪ লাখ টাকা তছরুপের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তালিকাভুক্ত বঞ্চিত এক উপকারভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের নির্দেশে গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম। ১৩ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি ট্রিবিউনের হাতে এসেছে।

তবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যাান করেছেন উপজেলা পরিষদের অভিযুক্ত চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু। তার দাবি, ‘অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সত্য নয়। তালিকা অনুযায়ী সোলার সিস্টেম বণ্টন না করা হলেও, তালিকা পরিবর্তন করে হত-দরিদ্রদের মধ্যেই সব সোলার সিস্টিম বিতরণ করা হয়েছে। পরিবর্তিত তালিকা অনুযায়ী তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে।’

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছর দ্বিতীয় পর্যায়ে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় ৪৭ লাখ ৮০ হাজার ৯৪৯ টাকার ২২টি প্রকল্প ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) সোলার কর্মসূচির আওতায় ৩৭ লাখ ১২ হাজার ৩৫৬ টাকার ২০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেন জেলার কর্ণধার কমিটি। কিন্তু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু উপকারভোগীদের মধ্যে তালিকা অনুযায়ী সোলার সিস্টেম বিতরণ না করে রিসডা বাংলাদেশের এরিয়া ম্যানেজার রিটন মিয়ার সঙ্গে যোগসাজশে বরাদ্দকৃত প্রকল্পের অর্থ তছরুপ করেন। এর প্রতিকার চেয়ে বঞ্চিত সুবিধাভোগী জয়নাল আবেদীন নামে এক ব্যক্তি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের থেকে তদন্ত করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র দেওয়া হয়।

পরে জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. হাফিজুর রহমানকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেন। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা, উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌলা ও অফিস সহকারী কম্পিউটার অপারেটর আমিনুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তালিকা মোতাবেক দৈবচয়ন পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত ৯ জন সুবিধাভোগীর বাড়িতে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করলে সাত ব্যক্তির বাড়িতে সোলার সিস্টেম সংযুক্ত না করার প্রমাণ পান।

অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর কাছে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি তালিকা অনুযায়ী সোলার সিস্টেম বিতরণ না করার বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেন এবং তালিকা পরিবর্তন করে সোলার সিস্টেম বিতরণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে পরিবর্তিত তালিকার অনুমোদন না নেওয়া নিজের অজ্ঞতা এবং ভুল উল্লেখ করে তিনি তদন্ত কমিটির ক্ষমা চান।

তদন্ত প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, সরেজমিন তদন্ত মোতাবেক দেখা যায় যে, অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়নি। প্রকল্প তালিকা সংশোধন করে জেলা কর্ণধার কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি, যা সম্পূর্ণ বিধি পরিপন্থী। ফলে সার্বিকভাবে বলা যায় যে, উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু কর্তৃক সোলার সিস্টেম স্থাপনে অনিয়মের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত।

মন্তব্যে আরও বলা হয়েছে, উপজেলায় ইডকল কর্তৃক নিয়োজিত রিসডা, বাংলাদেশ (প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চুক্তিবদ্ধ সংস্থা) পরিবর্তিত তালিকা অনুযায়ী সোলার সিস্টেম স্থাপনে বাধ্য হওয়ার দাবি করলেও তারা এ বিষয়ে উপজেলা কিংবা জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেনি। ফলে ইডকল কর্তৃক অনুমোদিত রিসডা বাংলাদেশও অনিয়মের অভিযোগ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১৭ মে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে সুপারিশপত্র পাঠান জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের অভিযুক্ত চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, ‘তালিকা পরিবর্তন করলেও সোলার সিস্টেম বিতরণ না করে আমি তা আত্মসাৎ করিনি। পরিবর্তিত তালিকা অনুযায়ী সবার বাড়িতে সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।’

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে মন্টু বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করে এসব করাচ্ছে। বিষয়টি পুনঃতদন্তের জন্য আমি মন্ত্রণালয়ে আবারও আবেদন জানাবো।’

জেলা প্রশাসক মো. বেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।