প্রশ্নবিদ্ধ এমসি কলেজের তদন্ত কমিটি, বহাল তবিয়তে হোস্টেল সুপার

 এমসি কলেজ ছাত্রাবাস

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে সিলেটে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কলেজের ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে ছাত্রাবাসের হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিনকে। অথচ মূলত তার আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের কয়েকটি ব্লক দখল করে রাখে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। এদিকে নিরাপত্তা পালনে গাফিলতির অভিযোগে শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ছাত্রাবাসের দুই নিরাপত্তা কর্মীকে বরখাস্ত করা হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন।

এ বিষয়ে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ উদ্দিন আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কমিটি যাতে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করে সেজন্য সবার পরামর্শ অনুযায়ী কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে আহ্বায়ক রাখা হয়েছে। আর ছাত্রাবাসের বিস্তারিত বিষয় জানার জন্য হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিনকে রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে ১ সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব নেওয়া আরেক হোস্টেল সুপার কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জীবন কৃষ্ণ ভট্টাচার্যকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

যার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তাকে কমিটিতে রাখার বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা ন্যক্কারজনক। এই ঘটনায় আমরাও হতবাক। হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিনকে কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে কারণ তিনি এই ছাত্রাবাসের অনেক পুরাতন হোস্টেল সুপার। তার অনেক বিষয় জানা রয়েছে। অতীতে কী হয়েছে আর বর্তমানে কীভাবে কী ঘটনা ঘটেছে তা জানার জন্য তাকে রাখা হয়েছে। অন্য কোনও কারণ নেই।

দায়িত্ব পালনের অবহেলার অভিযোগে ছাত্রাবাসের দুই নিরাপত্তা কর্মীকে বরখাস্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের কাজ হলো ছাত্রাবাসের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করা। ছাত্রাবাসের ভেতরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অথচ তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। তারা তাদের

দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করেছে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় জরুরি বৈঠকে বসে রাসেল মিয়া ও সবুজ আহমদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা মাস্টার রোলে চাকরি করতেন।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ আরও বলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। ছাত্রাবাস থেকে দুই নিরাপত্তা কর্মীকে বরখাস্ত করা হলেও হোস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সূত্র জানায়, এমসি কলেজ হোস্টেল সুপারের বাংলোতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে অবস্থান করছে ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান। তার দখলে থাকা ওই বাংলো থেকেই পুলিশ শুক্রবার একটি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি রামদা, একটি ছুরি ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শাহপরাণ থানার এসআই মিল্টন সরকার বাদী হয়ে সাইফুরকে একমাত্র আসামি করে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন। করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে এমসি কলেজ বন্ধ থাকলেও ছাত্রাবাস খোলা ছিল। ছাত্রাবাসে শুধু সাইফুর নয় হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ছাত্রাবাসে থাকতো অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের কর্মীরা নানা ধরনের উৎপাত করলে হোস্টেল সুপার একেবারেই নীরব ছিলেন।

উল্লেখ্য, শুক্রবার এমসি কলেজে ঘুরতে আসা এক দম্পতিকে আটক করে জোর করে ছাত্রাবাসে তুলে আনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর গৃহবধূর স্বামীকে বেঁধে মারধর করে ওই তরুণীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে সাইফুরসহ অন্যরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী শুক্রবার রাতে বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে ৬ জনকে। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলো এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। এরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র।

 

আরও পড়ুন: 

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ: আরেক আসামি গ্রেফতার

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ: প্রধান আসামি গ্রেফতার

ধর্ষণ মামলার আসামিদের ধরতে সীমান্তে নজরদারি

প্রাইভেট কারেই ধর্ষণ করা হয় ওই গৃহবধূকে 

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের দুই নিরাপত্তাকর্মী বরখাস্ত 

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ কর্মীদের শাস্তি চায় আ.লীগ

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ, ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আটকে রাখা দম্পতিকে উদ্ধার করলো পুলিশ

কলেজ বন্ধ, তারপরও শিক্ষার্থী ছিল এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে