এমসি কলেজে ধর্ষণ: দায় স্বীকার করেছে সাইফুর-অর্জুন-রবিউল

আদালত প্রাঙ্গণে আসামিরাএমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ সংঘব্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে তিন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। শুক্রবার (২ অক্টোবর) পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে নিয়ে আসা হয়। দোষ স্বীকার করে মামলার এক নম্বর আসামি সাইফুর রহমান, চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর এবং পাঁচ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম পৃথক আদালতে এই জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি শেষে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেটের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার অমূল্য কুমার চৌধুরী।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ পাহারায় আসামিদের আদালতে নিয়ে আসা হয়। এ দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড শেষ করেন আদালতের বিচারক। আসামি সাইফুর ও অর্জুন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জিয়াদুর রহমানের কাছে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় মামলার এজাহার নামীয় আসামি রবিউল ইসলাম রাত ৭টার দিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় বিচারক সাইফুর রহমানের কাছে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করে।

শনিবার অপর তিনি আসামি মাহবুবুর রহমান রনি, আইনুদ্দিন, রাজ চৌধুরী রাজনকে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।

অমূল্য কুমার চৌধুরী জানান, সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলাম ধর্ষণের ঘটনায় দোষ স্বীকার করে আদালতে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা জবানবন্দি প্রদান করে। এ সময় তারা ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আসামিদের আদালতে নিয়ে আসার পর তিন ঘণ্টা করে সময় দেওয়া হয় প্রত্যেককে। এরপর একে একে প্রায় দেড় ঘণ্টা করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে। দোষ স্বীকার করার সময় আসামিরা স্বাভাবিকভাবে সবকিছু বর্ণনা দেয়। তারা ধর্ষণের সঙ্গে কারা জড়িত ছিল তাদের নাম আদালতকে জানানোর পাশাপাশি কার কী ভূমিকা ছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়।

সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা কালে আসামি সাইফুর, অর্জুন, রবিউল প্রথম দিকে একে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছিল। এ কারণে পুলিশ ধর্ষকদের চিহ্নিত করতে তাদের ডিএনএ’র নমুনা বৃহস্পতিবার সংগ্রহ করে। এর আগে ধর্ষণ মামলায় এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও আসামি অর্জুন লস্কর সোমবার দুপুরে এবং একইদিন বিকালে মামলার ৫নং আসামি রবিউল ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সেদিন তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এক দম্পতি নিজেদের গাড়ি নিয়ে এমসি কলেজ এলাকায় বেড়াতে যান। সিলেট-তামাবিল সড়কের পাশেই কলেজটির অবস্থান। ১২৮ বছরের পুরনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরের মাঠে অনেকেই বেড়াতে যান। এক দল তরুণ স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই গাড়িসহ জোর করে ছাত্রাবাসের দিকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে গাড়ির ভেতরেই সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী শাহপরারণ থানায় ছয় জনকে এজাহার নামীয় আসামি এবং আরও দু-তিন জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন।