গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে সংঘবদ্ধ নির্যাতন: বাদল, কালামদের খুঁজছে পুলিশ

গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বাদল।

নোয়াখালীতে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে মুখমণ্ডলে লাথিমারাসহ মারধরের ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করায় ঘটনায় জড়িতদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশের ৫টি ইউনিট। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নির্দেশে মাঠে কাজ করছে এসব টিম। এ অভিযান পুলিশ সুপার নিজেই তদারকি করছেন বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

নির্যাতনের শিকার নারীর প্রাথমিক বক্তব্য এবং গ্রেফতার হওয়া একজনের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছিল কমপক্ষে ৯ জন। এরা হচ্ছে বাদল, কালাম, আব্দুর রহিম প্রমুখ। এদের মধ্যে আব্দুর রহিম (২২)কে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ সুপারের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এ ঘটনায় যারাই অভিযুক্ত থাকবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ চৌধুরী বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবদুর রহিমকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া, বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তবে এ ঘটনায় গভীর রাতে মামলা হয়েছে বলে শোনা গেছে। তবে মামলায় দেলোয়ার বাহিনী প্রধান দেলোয়ারকে আসামি করা হয়নি এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার আরেক অভিযুক্ত কালাম।

 

এদিকে, এ ঘটনার ভিডিও প্রকাশ এবং গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরপরই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা একযোগে আওয়াজ তুলছেন। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সংবাদকর্মী, মানবাধিকার কর্মীসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাক্টিভিস্টরা পোস্ট দিয়ে হামলাকারীদের প্রতি তাদের ঘৃণা প্রকাশ করেছেন।

 গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার দেলোয়ার বাহিনী প্রধান দেলোয়ার যুক্ত এমন অভিযোগ থাকলেও অজ্ঞাত কারণে মামলার আসামি তালিকায় তার নাম নেই।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার একটি সূত্র জানায়, পুলিশ রবিবার নির্যাতনের শিকার ওই নারীকে তার বাবার বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যায়। এসময় তিনি পুলিশকে জানান, এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২০/২৫ দিন আগে। সেসময় এ ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। তবে তিনি হামলাকারীদের ভয়ে এতদিন থানায় এসে অভিযোগ করার সাহস পাননি।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী পুলিশকে জানান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বড়খাল এর পাশে নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে এই হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সেখানে ঘটনার নেতৃত্ব দেয় দেলোয়ার বাহিনী প্রধান দেলোয়ার। আর ঘটনার জড়িত ছিল বাদল, কালাম, আব্দুর রহিমসহ আরও একজন। এই ভিডিও ওরা প্রকাশ করে দেবে তিনি এই ভয়ে ছিলেন এতদিন। 

ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারীরা ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলতে থাকে। তিনি প্রাণপণে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু, তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেনি। বরং হামলাকারীদের একজন তার মুখমণ্ডলে লাথি মারে ও পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেয়। এরপর তার শরীরে একটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝেই আঘাত করতে থাকে। এসময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চেঁচায় আরেকজন।

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এই ঘটনায় অভিযুক্তরা সরকারদলীয় কয়েকজন নেতার প্রশ্রয়ে এলাকায় মাস্তানি করে বেড়ায়। তারা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন:
গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে সংঘবদ্ধভাবে নির্যাতন, গ্রেফতার ১