নোয়াখালীর বেগমগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় গতকালের মতো আজও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সারা দেশে। বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদসভা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ:
সকালে নোয়াখালী প্রেসক্লাব, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়ক, মাইজদী প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধনে উত্তাল হয়ে উঠে। জেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে জেলা যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্ক।
জেলা যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ও জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে এবং তোফাজ্জল হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, এবিএম আবদুল আলিম, মুহাম্মদ আলমগীর, দৈনিক সচিত্র নোয়াখালীর প্রকাশক ও সম্পাদক আমিরুল ইসলাম হারুন, কাউন্সিলর লিলি রহমান, ব্র্যাক জেলা সমন্বয়কারী আক্তারুল ইসলাম, মো.সাইফুল ইসলাম, ব্র্যাক সামাজিক ক্ষমতায়ণ কর্মসূচির মেহেদী হাসান প্রমুখ। বক্তারা অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এছাড়া এই ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জেলা শহর মাইজদীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ‘স্টুডেন্টস অব নোয়াখালী’সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ ইয়ংস্টার সোসাইটি অর্গানাইজেশনের আয়োজনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া উচ্চ মাধ্যমিক শাখার ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করে। এ সময় তারা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বর্বর নির্যাতন, ধর্ষণ চেষ্টা ও শ্লীলতাহানি ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার এবং সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বিক্ষোভে অংশ নেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখার, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, ধর্ষকের কোনও দল নেই। ধর্ষক একজন অপরাধী। সে যে দলের কর্মী-সমর্থক হোক না কেনও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
মানববন্ধনে ইসলামী ছাত্র খেলাফত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সভাপতি মুফতি নিয়ামুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা হাফেজ ইদ্রিস, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বোরহান উদ্দিন কাসেমী, প্রচার সম্পাদক মুফতি এনামুল হাসান’সহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বক্তারা, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নির্যাতন ও সিলেট এমসি কলেজের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারকে কঠোর হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।
এতে বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুর রউফ ইমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শফিউল ইসলাম সজন, লিমন ইসলাম, আসাদুল্লাহ আল গালিব, স্টেট ইউনিভার্সিটির সালেক মাসুদ, ইউডা বিশ্ববিদ্যালয়ের আল মুজাহিদ রতন ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের আবির হামজা প্রমুখ। বক্তারা বলেন, দেশের পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল খুললেই পাওয়া যায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। এসব ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধন চলাকালে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিতু মনি, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থী পূজা কর্মকার, শেখ লুৎফর রহমান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী স্বর্ণালী মণ্ডল বক্তব্য রাখেন।
অপরদিকে, বেলা ১২টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের সামনে গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কের উপর দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন চলাকালে আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শরীফ হাসান, মাহাবুব হোসাইন, সোহানা খানম বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা বলেন, সারা দেশে ব্যাপক হারে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলছে। দ্রুত এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।
মঙ্গলবার সকালে ভোলা প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে শহরের বিভিন্ন কলেজ, মাদ্রাসা, স্কুলের কয়েক শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী ধর্ষণ প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, ও প্লেকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ মানববন্ধনে বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তাঘাট, বাজার, কর্মস্থল ও বাড়িঘরে কোথাও আজ নারী-শিশুরা নিরাপদ নয়। স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। অবুঝ শিশুকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। বাবার সামনে থেকে মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই সামাজিক অপরাধ থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বক্তব্য রাখেন, ভোলা জেলা সচেতন নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম, ভোলা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়ারুল আলম লিটন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিরাজুম মুনিরা, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইরফান হৃদয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরে আনজুম, ভোলা কলেজের মেহেদী আরেফিন, বরিশাল বিএম কলেজের তাহসিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা, ধর্ষণের বিচার দ্রুত করার জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং ১০০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করাসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।
বক্তারা বলেন, বর্তমান সময়ে সারা দেশে হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘটনা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকহারে। কিন্তু এসব অনৈতিক কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের উল্লেখযোগ্য কোনও শাস্তি হচ্ছে না। সিলেটের এমসি কলেজে নারী ধর্ষণসহ সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ছাত্র সমাজের এই কর্মসূচি থেকে উদ্বেগ জানানো হয়। হুশিয়ারি দেওয়া হয় রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা এখনই দেশের সুনাম বিনষ্টকারী ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করলে ছাত্র সমাজ রাজপথেই এর সমাধান খুঁজবে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী তৌফিক শুভর সঞ্চলনায় মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এএএম সাইফুর রশিদ, ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহসিন কবির, প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসেন, সংস্কৃতিকর্মি শাওন দাস, ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের জনি আহমেদ ও ওয়াজেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী রনি বিশ্বাস, সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তামান্না সাকিব ও মিঠুন।
সাকিয়া বলেন, আমি মেয়ে সন্তানের একজন মা। আমি, আমার মেয়ে কেউই আজ এ সমাজে নিরাপদ নই। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যেই ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি।
মাসুম রহমান বলেন, মানুষরূপী জানোয়ারগুলোর হিংস্র থাবা থেকে শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউই রক্ষা পাচ্ছে না। এমন কী তারা হিংস্রতার অংশ হিসেবে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে সেই নগ্নতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছি।
৩০ মিনিটব্যাপী এই কর্মসূচি চলাকালে তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে হাতে লেখা ধর্ষণ বিরোধী প্লাকার্ড নিয়ে পথচারীদের কয়েকজন দাঁড়িয়ে যান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্বাস তালুকদার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইমন চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক সৈকত বল, সদর উপজেলার সভাপতি শংকর দত্ত, সাধারণ সম্পাদক আবির হাসান’সহ মহিলা পরিষদ, কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ছাত্র ইউনিয়ন রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল হালিম বাবু, সাধারন সম্পাদক কাউসার আহম্মেদ রিপন, সদস্য আনিছা আক্তার, নির্যাতন নিপিরন বিরোধী আন্দোলন জেলার কমিটির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান বাবলু প্রমুখ।
জেলা মহিলা পরিষদের সহ সভাপতি সঞ্চিতা চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা উদিচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচতে বক্তব্য রাখেন, অ্যাডভোকেট খলিল রহমান, জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা মিন্টু চৌদুরী, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দুর্যোধন সরকার, সাধারণ সম্পাদক আসাদ মনি প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা ধর্ষণ, নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ সকল প্রকার সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর অবস্থানে থাকা ও সকল অপরাধীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। একইসঙ্গে সকল অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় তৈইবুর রহমান খান, বেবরাজ, মুহিত হাসান তড়িৎসহ আরও অনেকেই বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের ব্যানারেও শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
জানা যায়, ভারশোঁ গ্রামের পশ্চিম পাড়া গ্রামের শাহজাহানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম পার্শ্ববতী ইউনিয়নের শালদহ গ্রামে বিয়ে করে ৬-৭ বছর সংসার করেন। বিয়ের পর থেকে ওই স্ত্রীকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করতেন। পরে আদালতের মাধ্যমে এক বছর আগে ডিভোর্স দেন। তার কিছুদিন পরই উপজেলা পরানপুর ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামের বাবুলের মেয়ে সুরাইয়াকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে সুরাইয়াকে নানাভাবে নির্যাতন করতেন জাহিদুল। গত তিন দিন থেকে জাহিদুল ও তার বাবা-মা মিলে সুরাইয়াকে নির্যাতন করা হচ্ছে এমন অভিযোগে গৃহবধূর বাবা আব্দুর রকিব থানায় অভিযোগ করেন। সোমবার দুপুরে পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় গৃহবধূকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জাহিদুল বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পাশ্ববর্তী বাঁকাপুর গ্রামের ফুফুর বাড়ি থেকে স্থানীয়রা জাহিদুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় গৌরাঙ্গ, সঞ্জয় ও বাবুসহ অনেকে। বক্তারা অভিযুক্ত ও তার সহযোগিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দেশব্যাপী অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী সহিংতার প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের দ্রুত বিচারের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে হবিগঞ্জে পৃথক মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠন।
দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে মানববন্ধন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট। সংগঠনের জেলা সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ ধর শান্তনু, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পীযুষ চক্রবর্তী, জাসদ সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ইয়াছিন খান প্রমুখ।
এর আগে হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের সামনে ‘ধর্ষণ প্রতিরোধ গণঐক্য’র ব্যানারে মানববন্ধন করে বিভিন্ন স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শতাব্দী চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগ আহ্বায়ক ফয়জুর রহমান রবিন, শাহ জয়নাল আবেদীন রাসেল, শিরিন আক্তার সোনিয়া। মানববন্ধনে অভিযাত্রী, সন্ধান, হবিগঞ্জ নারী সমিতি, লাল সবুজ সংঘ, মায়ের মমতা, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য ছাত্র পরিষদ, মানবিক বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও সিলেটে এমসি কলেজে নববধূকে গণধর্ষণসহ সারা দেশে সংঘটিত ধর্ষণ-নিপীড়নে জড়িতদের বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শহরের নিউমার্কেটস্থ শহীদ আলাউদ্দিন চত্বরে উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মো. আনিসুর রহিমের সভাপতিত্ব বক্তব্য রাখেন, অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, আনিসুর রহিম, অ্যাডভোকেট শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, এম. কামরুজ্জামান, নারী নেত্রী জোন্সা দত্ত, চৈতালী মুখার্জী, মরিয়ম মান্নান, অধ্যাপক সালেহা আক্তার প্রমুখ।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বানে উক্ত কর্মসূচিতে উদীচী শিল্প গোষ্টী, জেলা মহিলা পরিষদ, আইন ও শালিস কেন্দ্র, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, নিউজ নেটওয়ার্ক, উত্তরণ, স্বদেশ ও প্রগতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করে। এদিকে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলা সদরেও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, দেশব্যাপী অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে নরসিংদীতে প্রতিবাদ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে 'আমরা তরুণজোট' শীর্ষক ব্যানারে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন করা হয়। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে বেলা ১০টার দিকে নরসিংদী পৌরসভার সামনে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে জড়ো হয় শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে তারা সেখান থেকে বৃষ্টিতে ভিজে শ্লোগান দিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে উপস্থিত হয়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদে হাতেলেখা বিভিন্ন ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন। এতে সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাবু ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ রায়হানসহ দুই শতাধিক কর্মী অংশ নেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে নারী নির্যাতনের ওই বর্বর ঘটনা পর আমরা এই প্রতিবাদে মাঠে নেমেছি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে দিনের পর দিন ঘটে যাওয়া প্রতিটি নারী নির্যাতনের ঘটনার দ্রুত বিচার করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
পরে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা নরসিংদীর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৭ দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি দেন। শিক্ষার্থীদের হাত থেকে জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কমল কুমার ঘোষ।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠির রাজাপুরে দেশব্যাপী অব্যাহত ধর্ষণ, নির্যাতন ও নারী সহিংসতার প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের দ্রুত বিচার আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার বাগড়ি আলহাজ লালমোন হামিদ মহিলা কলেজ সংলগ্ন থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে রাজাপুর প্রেসক্লাব চত্বরে এসে এক বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মানববন্ধনের আয়োজক ‘সত্যের সন্ধানে ডেপলপমেন্ট অরগানাইজেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সাগর হোসেন, মাহিম, আরাফাত প্রমুখ।
এ সময় কর্মসূচিরর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক কাজী আব্দুর রহমান, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী, প্রেসক্লাব সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ ইমরান’সহ জেলার বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জেলা প্রশাসক কাজী আব্দুর রহমান বলেন, দেশে যে সমস্যা বিরাজ করছে এটি একটি পারিবারিক অবক্ষয়। যে কারণে হীন মানসিকতার মানুষরাই মেয়েদের ওপর এমন বর্বর নির্যাতন করতে পারে। আমরা সবাই তাদের শাস্তি চাই এবং দেশের প্রচলিত আইন সেটির ব্যবস্থা করবে। কর্মসূচিতে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী ছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্কের জামালপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর সেলিমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উদীচী জেলা সংসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী ইমাম দুলাল, তরঙ্গ মহিলা কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আলী ইমাম দুলাল, নাট্যকর্মী শাহীন রহমান, সংস্কৃতি কর্মী তারিকুল ফেরদৌস, সাংবাদিক শরীফ, জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি মনির হুসেন খান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতি কর্মী এমআরআই রাসেল। মানববন্ধন আয়োজন করে জামালপুরের সকল পর্যায়ের সংস্কৃতি কর্মীবৃন্দ।
সন্ধ্যায় শহরের বাজার স্টেশন মুক্তির সোপানে স্কুলের এসএসসি-২০১৭ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা হাতে প্লেকার্ড নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন। নেতৃত্ব দেন দলনেতা জুবায়ের হোসেন। কর্মসূচির মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বিবস্ত্র করে নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন এলাকায় গণধর্ষণ, ধর্ষন ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বাউফলে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাউফল প্রেস ক্লাব চত্বরে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ বাউফল উপজেলা শাখার উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন, মো. রাসেদুল ইসলাম রাসেদ, মো. জুবায়ের হোসেন, হাসান মাহাম্মুদ, এমদাদুল হক, ইমরান হোসেন প্রমুখ।
বাউফল ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মো. রাসেদুল ইসলাম রাসেদ ছাড়াও এতে বক্তব্য রাখেন বাউফল ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মো. জুবায়ের হোসেন’সহ অন্যরা।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনসহ দেশব্যাপী নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে মৌলভীবাজারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল সংগঠন। আজ দুপুরে শহরের চৌমুহনা এলাকায় প্রগতিশীল সংগঠনসমূহের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক মীর ইউসুফ আলী।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা বিশ্বজিত নন্দীর সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক নিলিমেষ ঘোষ বলু, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর জয়েস, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি রেহনুমা রুবাইয়াত ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পিনাক দেব।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নারী নির্যাতন, তনু হত্যার মতো আলোচিত অনেক অপরাধের বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে সমাজে খুন ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা বেড়েই চলছে। এসব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের পাশাপাশি তাদের আশ্রয়দাতাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় এই প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
চবি প্রতিনিধি জানান, এমসি কলেজ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জসহ সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগ। সমাবেশ থেকে ধর্ষণে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এদিকে ধর্ষণে সহায়তার মামলায় অভিযুক্ত ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকেও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে চবি শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর আগে সকাল দশটার দিকে একই স্থানে সর্বস্তরের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে আরেকটি মানববন্ধন হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চবি ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল, শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক শরীফ উদ্দিন, সাবেক পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক আবু বকর তোহা, সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল হাসান দিনার, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শরীফুল ইসলাম, উপ আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক শায়ন দাস গুপ্ত ও ছাত্রলীগ নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় প্রমুখ।