‘হত্যাকারীরা পরিচিত না হলে দরজা খুলতো না শাহিনুর’





হত্যাকাণ্ডের শিকার শাহিনুরসাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের চার সদস্য হত্যাকাণ্ডে চেনা-জানা কেউ জড়িত বলেই ধারণা স্থানীয় ও স্বজনদের। অপরিচিত কেউ হলে দরজা খুলতো না নিহত শাহিনুর। জমি-জমা, মাছের ব্যবসায় প্রভাবশালী কারও সঙ্গে বিরোধ অথবা মাদক ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েজনকে নজরদারিতে রেখেছেন।

কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর খলসী ওয়ার্ড সদস্য সোহরাব হোসেন বলেন, শাহিনুর একজন ভালো মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল। সে (শাহিনুর) খুবই সচেতন এবং বুদ্ধিমান ছিল। ধারণা করছি হত্যাকারী পরিচিত কেউ না হলে শাহিনুর কখনো দরজা খুলতে না। ফোন দিয়ে অথবা চিৎকার করে আশপাশের মানুষদের ডাকতো। হত্যার পর যারা ঘটনাস্থল থেকে শিশু মারিয়াকে উদ্ধার করার সময়ে রায়হানুল ও তার প্রতিবেশীরা যখন গিয়েছে, তারা দেখেছে চিলেকোঠার দরজার তালা চাবি দিয়ে খোলা ছিল।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী আকবরের সঙ্গে বাড়ির সীমানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল শাহিনুরের। তারাও এ ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। হত্যাকারীরা প্রথমে শাহিনুরকে হত্যা করে পরে শাহিনুরের স্ত্রী বিষয়টি জানতে পারায় হয়তো তাকেও হত্যা করে। পরে পিতা-মাতাকে হত্যার সময় হত্যাকারীদের চিনতে পারায় দুই শিশুকেও হত্যা করা হয় বলে ধারণা করছেন তারা। তবে হত্যাকাণ্ড দেখে পেশাদার খুনি বলে মনে হচ্ছে না। শাহিনুর রহমানকে পা বেঁধে আলাদা একটি ঘরে হত্যা করা হয়েছে। দুই বাচ্চা ও মাকে আলাদা আরেকটি ঘরে হত্যা করা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে কাজ করছে দ্রুত খুনিরা ধরা পড়বে।

স্বামী শাহিনুরের সঙ্গে দুর্বৃত্তের হাতে খুন হন স্ত্রী সাবিনানিহত শাহীনুরের মা শাহিদা খাতুন বলেন, আমার শাহিনুর কোনও ঝামেলায় যেতো না। কেন এভাবে তাকে মারা হলো। আমাদের প্রতিবেশী আকবরের সঙ্গে বাড়ির সীমানা নিয়ে ঝামেলা ছাড়া তার আর কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল না। তবে আমার ছোট ছেলে রায়হানুল এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে না। তাকে বিনা দোষে ফাঁসানো হচ্ছে। হত্যাকারী যেই হোক তার বিচার দাবি করছি।

সাতক্ষীরা সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান জানান, এই হত্যা মামলটি সিআইডি কাছে তদন্তের ভার পড়েছে। সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে। নিহতের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তাকে আমলি আদালত-৪ এর বিচারক রাজীব রায়ের আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানান বিশেষ পুলিশ সুপার।

দুর্বৃত্তরা ছাড় দেয়নি শাহিনুরের ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি ও মেয়ে তাসনিমকেপ্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ভোররাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে একই পরিবারের চার জনকে জবাই করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন খলসি গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে হ্যাচারি মালিক শাহিনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (১০) ও মেয়ে তাসনিম (৭)। গভীর রাতে কলারোয়ার ব্রজবক্সা গ্রামে নানার বাড়িতের চার জনকে দাফন করা হয়। রাতে শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা (নম্বর- ১৪) দায়ের করেন। এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডি পুলিশকে। এ ঘটনায় নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি পুলিশ। রায়হানুল ইসলামকে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শাহিনুরের চার মাসের মেয়ে মারিয়া সুলতানার দায়িত্ব নিয়েছেন ডিসি এসএম মোস্তফা কামাল। তিনি ওই শিশুর সব ব্যয় বহন করবেন বলে জানিয়েছেন। শিশুটি বর্তমানে হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য নাসিমা খাতুনের হেফাজতে রয়েছে।


আরও পড়ুন:

চিলেকোঠা দিয়ে ঘরে ঢুকে চার জনকে গলা কেটে হত্যা!

পরিবারের চার সদস্য খুনের মামলায় নিহতের ছোট ভাই গ্রেফতার

বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের চিনতে পারায় দুই শিশুকেও হত্যা!

পরিবারের চার সদস্য খুন, শিশুর দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক